ধরমপাশার গণপাঠাগারে তালা ঝুলছে তিন বছর

ধরমপাশা গণপাঠাগারে দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলছে l ছবি: প্রথম আলো
ধরমপাশা গণপাঠাগারে দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলছে l ছবি: প্রথম আলো

প্রয়োজনীয় আসবাব, বই ও লোকবলের অভাবে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলা পরিষদ লাগোয়া একমাত্র সরকারি গণপাঠাগারটিতে তিন বছর ধরে তালা ঝুলছে। এটি বন্ধ থাকায় স্থানীয় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চাহিদামাফিক বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলা প্রশাসন, এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ পুকুরসংলগ্ন স্থানে তৎকালীন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান ভূঞার চেষ্টা ও এলাকাবাসীর সহায়তায় ১৯৯৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ছিল শত শত মূল্যবান বই। প্রতিদিনই এখানে বসত নানা শ্রেণি-পেশার পাঠকদের জমজমাট আসর। ২০০৪ সালের বন্যায় পাঠাগারটির ভেতরে পানি ঢুকে এর বই ও আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় পাঠাগারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে উপজেলা প্রশাসন বইপত্র সংগ্রহ ও আসবাব সংস্কার করে পুনরায় এটি চালু করে। কিন্তু ২০০৮ সালে পাঠাগারটি থেকে আট শতাধিক মূল্যবান বই ও বেশ কিছু আসবাব চুরি হয়। ফলে আবারও এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পাঠাগারটি চালুর দাবিতে এর চত্বরে ধরমপাশা সাহিত্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন আমরণ অনশন শুরু করলে এটি চালু করতে বাধ্য হয় উপজেলা প্রশাসন।

কিন্তু ২০১৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটির টিনের ছাউনির একটি অংশ ভেঙে যায়। এতে ভেতরে থাকা পাঁচ শতাধিক বই বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। এরপর আবার বন্ধ হয়ে যায় পাঠাগারটির কার্যক্রম। জেলা পরিষদের অর্থায়নে বছরখানেক আগে ভবনটি সংস্কার করা হলেও এখনো এটি চালু করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ধরমপাশা ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবীর বলেন, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশের জন্য এই গণপাঠাগারটির গুরুত্ব অপরিসীম। পাঠাগারটি চালু করার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন হুমায়ুন কবীর।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ধরমপাশা উপজেলা শাখা সংসদের সভাপতি চয়ন কান্তি দাস বলেন, ধরমপাশা সাহিত্য পরিষদ আমরণ অনশন করায় উপজেলা প্রশাসন এটি চালু করেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায়। বছরখানেক আগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ভবনটিতে কিছু সংস্কারকাজ করা হয়। কিন্তু আসল কাজের দিকে কারও খেয়াল নেই।

ধরমপাশা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি আনিসুল হক বলেন, পাঠাগারটি চালু করা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তা ছাড়া আজও পাঠাগারটি থেকে চুরি যাওয়া বই ও আসবাব উদ্ধার হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশাজনক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন খন্দকার বলেন, প্রয়োজনীয় বই ও আসবাবের ব্যবস্থা করে খুব শিগগির এটি চালু করার ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।