তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর স্নাতকের সনদ জাল?

বরিশাল সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব হাওলাদারের স্নাতকের (বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) সনদ জাল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লেখা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আবদুস সাত্তার মিয়ার গত ২৩ মে স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির দেওয়া সনদটি অবৈধ বলে তদন্ত কমিটির কাছে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

সিটি করপোরেশনের চাকরির বিধি অনুযায়ী, নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলীর পদোন্নতি পেতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান থেকে পুরকৌশল বিষয়ে স্নাতক পাসের সনদ থাকতে হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মোতালেব ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (নাটোর) থেকে স্নাতকের (বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) সনদ সংগ্রহ করে করপোরেশনে জমা দেন। কিন্তু ওই সনদ অবৈধ উপায়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশল মুহাম্মদ আনিচুজ্জামান। তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর এই অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিন সদস্যের ওই কমিটি ২৩ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিকে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়। কিন্তু আবদুল মোতালেবকে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্নাতক সনদ দেওয়া হয়। জালিয়াতি করে চার বছর মেয়াদি সনদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ বছর ৫ মাসে।

আবদুল মোতালেব হাওলাদার সৌদি আরব রয়েছেন। এ কারণে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে, মুহাম্মদ আনিচুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথ সনদ না থাকার পরও একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা করপোরেশনের চাকরিবিধির লঙ্ঘন।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আমার কাছে আসেনি। এলে সেটা অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী আনিচুজ্জামান এ রকম একটি চিঠি আমাকে দেখিয়েছেন। ওই চিঠি মেয়রকে উদ্দেশ করে লেখা।’

মেয়র আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মোতালেব হাওলাদারকে পদোন্নতি নয়, চলতি দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে।’

২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে ‘যথাযথ সনদ ছাড়াই নিয়োগ, চলতি দায়িত্ব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।