নদীতে প্লাস্টিক-পলিথিন কারখানা

কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা। এসব কারখানার অব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন নদীতে ফেলা হচ্ছে l ছবি: প্রথম আলো
কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা। এসব কারখানার অব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন নদীতে ফেলা হচ্ছে l ছবি: প্রথম আলো

কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের লোহার সেতু এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১৫টি প্লাস্টিক ও পলিথিন রিসাইক্লিং (পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে পণ্য তৈরি) কারখানা। এসব কারখানার প্লাস্টিক ও পলিথিন পোড়া গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা। কারখানাগুলোর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীর আদি চ্যানেলে। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আশ্রাফাবাদ এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম মাতবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল ভরাট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই এই কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে। এসব প্লাস্টিক ও পলিথিন পোড়ার দুর্গন্ধে মহল্লার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মহল্লার অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’ তিনি বলেন, নদীর ওই জায়গার মালিকানা দাবি করে অনেকেই জাল দলিল তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জনের কাছে তা বিক্রিও করছেন। ফলে কারখানার ফাঁকে ফাঁকে ঘরবাড়িও তৈরি হচ্ছে। তাই কারখানাগুলো উচ্ছেদ ও আদি চ্যানেলটি খননে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও ডিএসসিসিতে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রাফাবাদে লোহার সেতু থেকে পূর্ব পাশে ছাতা মসজিদ রোডে আছে টিন শেডের ওই ১৫টি কারখানা। এর মধ্যে ছাতা মসজিদ রোড ঘেঁষে আছে ৮টি প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানা। এসব কারখানার ভেতর ও বাইরে প্লাস্টিক পোড়া গন্ধে বাতাস ভার হয়ে আছে। এর মধ্যেই কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

ব্যবহৃত পলিথিন স্তূপ করে রাখা হয় বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের পারে। এগুলো আগুনে পুড়িয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়
ব্যবহৃত পলিথিন স্তূপ করে রাখা হয় বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের পারে। এগুলো আগুনে পুড়িয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়

প্লাস্টিকের কারখানাগুলোর পেছনে আছে পলিথিন রিসাইক্লিং করার ৭টি কারখানা। রিসাইক্লিং করা যাবে, এমন পলিথিন বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। রিসাইক্লিংয়ের অযোগ্য পলিথিনগুলো বস্তায় করে ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে। এভাবে এই চ্যানেলটির প্রায় অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে। কোনো কারখানাতেই প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা সংবলিত সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। কারখানা পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের যে ছাড়পত্র, তা-ও দেখাতে পারেননি মালিকেরা।

ছাতা মসজিদ রোডের বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, ১০ বছর আগেও এই এলাকায় প্লাস্টিক ও পলিথিনের কোনো কারখানা ছিল না। ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর ওই জায়গাটি ভরাট করা হয়েছে। পরে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন কারখানা গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, অব্যবহৃত পলিথিনগুলো দিনে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে ফেলা হয়। রাতে তা পোড়ানো হয়। এতে পুরো মহল্লায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার মালিকেরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

ছাতা মসজিদ রোডে কারখানাগুলোর সামনেই আছে সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। প্লাস্টিক ও পলিথিন পোড়ার দুর্গন্ধে স্কুলটির ক্লাস-পরীক্ষা ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। সপ্তম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী বলে, বাতাসে প্লাস্টিক ও পলিথিন পোড়ার গন্ধের কারণে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মাথা ভার হয়ে যায়। তাই অধিকাংশ সময় কারখানার দিকের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। একই কথা বলেছেন এই স্কুলের একাধিক শিক্ষকও।

বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কারখানায় প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করছেন শ্রমিকেরা
বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কারখানায় প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করছেন শ্রমিকেরা

আশ্রাফাবাদ লোহার সেতুঘেঁষা একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক মোহাম্মদ আলী। তাঁর কারখানায় প্লাস্টিকের বিভিন্ন আকারের বক্স ও বোতল তৈরি করা হয়। কারখানার ছাড়পত্র আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই কারখানা চালু করেছি।’ কিন্তু কোন কর্তৃপক্ষ থেকে তিনি অনুমতি নিয়েছেন, তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে প্লাস্টিকের আরেকটি কারখানা আছে। এটিরও কোনো নাম-ঠিকানা নেই। এই কারখানার মালিক আবুল কালামও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগরের পরিচালক মাসুদ ইকবাল মোহাম্মদ শামিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে কাল (আজ বৃহস্পতিবার) এই এলাকা পরিদর্শনে লোক পাঠানো হবে।’