ডিএনসিসির ১১ ইউটার্ন, নির্মাণকাজ শুরু নভেম্বরে

ইউটার্নের নকশা। যানজট নিরসনে উত্তরা থেকে থেকে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে িডএনসিসি
ইউটার্নের নকশা। যানজট নিরসনে উত্তরা থেকে থেকে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে িডএনসিসি

প্রকল্প অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ভূমি ব্যবহারে ছাড়পত্র না পাওয়াসহ নানা কারণে আটকে গিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১১টি ইউটার্ন (লেন পরিবর্তন করতে ভূমিতেই গাড়ি ঘোরানোর জায়গা) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। সব জটিলতা পেছনে ফেলে আগামী নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই এগুলো তৈরির কাজ শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ডিএনিসিসির কর্মকর্তারা।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এর মধ্যে ইউটার্ন তৈরির কাজ পাওয়ার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখন সেগুলো মূল্যায়নের কাজ চলছে। ভূমি ব্যবহারের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পেলেও একধরনের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। এ ছাড়া শুরুর দিকে এই প্রকল্পের সঙ্গে একই রুটে মেট্রোলের প্রকল্প ও বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের বিষয়টি ‘সাংঘর্ষিক’ মনে হওয়ায় এতে আপত্তি জানিয়েছিল ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। তাদের কাছ থেকেও সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডিটিসিএর একধরনের আপত্তি ছিল। তারাও এখন মোটামুটি আস্বস্ত হয়েছে। আশা করছি আর কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। দ্রুত আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’

ইউটার্ন তৈরির জায়গা নির্ধারণ করতে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর উত্তরার জসীমউদ্‌দীন মোড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। সেদিন মেয়র জানিয়েছিলেন, যানজট নিরসনে প্রাথমিকভাবে বনানী-কাকলী, এয়ারপোর্ট, উত্তরার জসীমউদ্‌দীন ও আবদুল্লাহপুরের ট্রাফিক মোড়ে চারটি ইউটার্ন নির্মাণ করার প্রকল্প নিয়েছে ডিএনসিসি।

পরে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ইউটার্ন নির্মাণবিষয়ক এক সভায় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত করতে ২২টি ‘ইউ’ আকৃতির গাড়ি ঘোরানোর জায়গা তৈরি করা হবে। ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৬৯টি ক্রসিং বন্ধ করে এসব ইউটার্ন নির্মাণ করা হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শুরুর দিকে ইউটার্নগুলো নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল ডিএনসিসি। কিন্তু ডিএনসিসির সীমানা আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত। আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সীমানা শুরু। ২২টি ইউটার্নের ১২টি ডিএনসিসি এলাকায় এবং ১০টি গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়ে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনামতো দুই সিটি করপোরেশন আলাদা দুটি প্রস্তাবনা জমা দেয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইউটার্ন প্রকল্পের ডিপিপি গ্রহণ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ডিপিপির প্রাথমিক সম্মতি দেয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা ১১টিতে নামিয়ে আনা হয়। এগুলো নির্মাণ করতে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ বিঘা জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা। এসব জমি খালি আছে, কোনো অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্থাগুলোর কাছে জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আমরা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পেলেও একধরনের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে।’

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইউটার্নগুলো তৈরি হলে এই বিমানবন্দর সড়কের যানজট প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমে যাবে। দুই ধরনের ইউটার্ন নকশা করা হয়েছে। একটিতে ছোট-বড় দুই ধরনের যানবাহনই চলবে, অন্যটিতে শুধু ছোট গাড়ি চলবে। একটি ইউটার্ন থেকে আরেকটি ইউটার্নের সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব ইউটার্ন দিয়ে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। ফলে তখন বিভিন্ন মোড়ে কোনো ট্রাফিক পুলিশেরও প্রয়োজন হবে না।

ইউটার্নগুলো যেসব জায়গায় হবে

উত্তরা রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, জসীমউদ্‌দীন রোড, র‍্যাব-১-এর কার্যালয়, কাওলার ফ্লাইং একাডেমি, আর্মি গলফ ক্লাব, বনানী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী-কাকলী রেলস্টেশন, চেয়ারম্যানবাড়ি, মহাখালী ফ্লাইওভার, মহাখালী আন্তনগর বাস টার্মিনাল, কোহিনূর কেমিক্যালস থেকে সাতরাস্তা ইন্টারসেকশন।