দ্বিজেন শর্মাকে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

সকাল থেকে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ; মনে হচ্ছিল মুষলধারে বৃষ্টি নামবে। ঝুম বৃষ্টি আর এল না। খানিক বাদে মেঘ সরে গিয়ে সূর্যটা উঁকি দিয়ে যেন নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিল। ঠিক যেমন করে তিনিও প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন।

দ্বিজেন শর্মাকে আজ রোববার সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে দ্বিজেন শর্মার মরদেহ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ সেখানে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থাকে।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয় দ্বিজেন শর্মার মরদেহ। এখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিজেন শর্মার শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই নিসর্গবিদের প্রতি জানানো হয় শেষ শ্রদ্ধা।
বাংলা একাডেমি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৃথক শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ইনাম আল হক, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ প্রমুখ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে দ্বিজেন শর্মাকে শ্রদ্ধা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আগে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিজেন শর্মা একজন প্রকৃতিবিদ, চিন্তক ও সংগঠক ছিলেন। কিছু কিছু তরুণ যাঁরা নিসর্গবিদ হতে চান; তিনি তাঁদের নিয়ে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন; তাঁদের গাছপালা চিনিয়েছেন। আজীবন তিনি এ কাজটি করে গেলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রথম আলোকে বললেন, ‘দ্বিজেন শর্মার কাছ থেকে আমরা প্রকৃতিকে চিনেছি। তিনি হাতে ধরে ধরে আমাদের দেশের বিরল বৃক্ষের কথা শুনিয়েছেন। দ্বিজেন শর্মার মতো আরেকজন প্রকৃতিবিদ আমাদের নেই।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিজেন শর্মার প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা। ছবি: প্রথম আলো
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিজেন শর্মার প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা। ছবি: প্রথম আলো

দ্বিজের শর্মার ছেলে রাশিয়াপ্রবাসী সৌমিত্র শর্মা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বাবার সঙ্গে যাদের দেখা হতো, তারা আর ভুলত না। এ রকম মানুষ খুব কম।’
বেলা একটার পর দ্বিজেন শর্মার মরদেহ নেওয়া হয় নটর ডেম কলেজে। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালী মন্দিরসংলগ্ন শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্নের কথা রয়েছে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় গত ২৩ আগস্ট দ্বিজেন শর্মাকে বারডেমের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার রাতে সেখান থেকে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। দ্বিজেন শর্মা গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।