এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে বিচ্যুতি ঘটার ঝুঁকি রয়েছে

‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান। ছবি: টিআইবির সৌজন্যে
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান। ছবি: টিআইবির সৌজন্যে

‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬ (এসডিজি)’ অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি যথেষ্ট এবং বিস্তৃত। কিন্তু ‘প্রায়োগিক’ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি থাকায় লক্ষ্য অর্জনে বিচ্যুতি ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। 

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। আজ রোববার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়। টিআইবি বলছে, আইন প্রয়োগ ও চর্চায় দুর্বলতা এবং ঘাটতি, আইনের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় আইনের প্রয়োগ ইত্যাদি কারণে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন শীর্ষ বৈঠকে ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্র এসডিজি গ্রহণ করে। ২০৩০ সালের মধ্যে সদস্যরাষ্ট্রগুলো এটি বাস্তবায়ন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
টিআইবি জানায়, এসডিজির দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট চারটি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে গবেষণাটি পরিচালনা করে তারা। এ বছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ের মধ্যে এটি পরিচালিত হয়। সংস্থাটি বলছে, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের জন্য এসডিজির প্রযোজ্য ২৪১টি সূচকের মধ্যে সরকারের কাছে ৭০টি সূচকের ওপর সম্পূর্ণ এবং ১০৮টি সূচকের ওপর আংশিক তথ্য রয়েছে। ৬৩টি সূচকের ওপর সরকারি কোনো তথ্য নেই। গুণগত এ গবেষণায় তথ্যের পরোক্ষ উৎস হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি, গবেষণা প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সূচক, দেশভিত্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন, জাতীয় তথ্যভান্ডার ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ব্যবহৃত হয়েছে।
টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সব স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ’ লক্ষ্যটির পর্যালোচনার জন্য সংসদ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসনসহ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের অন্তর্ভুক্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠান ও খাতগুলোকে বেছে নেওয়া হয়। সংসদের কার্যকারিতার বিষয়ে বিরোধী দলের দ্বৈত ও দুর্বল ভূমিকা, আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের সীমিত অংশগ্রহণ, স্থায়ী কমিটির অনিয়মিত বৈঠক, ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব, কমিটিগুলোর সক্রিয়তা ও কার্যকারিতার ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বচ্ছতার বিষয়ে বলা হয়েছে, সংসদে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা না হওয়া সংসদীয় কার্যক্রমে সীমিত প্রবেশাধিকার এবং সংসদ সদস্যদের আর্থিক তথ্য প্রকাশ না করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আর দায়বদ্ধতার বিষয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন ছাড়া জনগণের কাছে সাংসদদের দায়বদ্ধ করার কোনো ব্যবস্থা নেই এবং কোনো কোনো স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পিরচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আইনে, নীতি কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এবং সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আমরা অন ট্রাক আছি। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে অফ ট্রাক হওয়ার ঝুঁকি দেখতে পাই।’
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে নানামুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন জরিপ ও তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে এর সুফল সব ক্ষেত্রে জনগণ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সব পরিকল্পনা, কার্যক্রম ও কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম এবং এ এস এম জুয়েল মিয়া উপস্থিত ছিলেন।