ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিবিড়ভাবে পরীক্ষা হচ্ছে: আইনমন্ত্রী

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের যে অবজারভেশন (পর্যবেক্ষণ), তা নিশ্চয়ই লিখিতভাবে যাঁরা রিভিউ তৈরি করবেন, তাঁদের কাছে পাঠাব ও তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে আজ রোববার নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ৩৬তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। 

ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিষয়ে সংসদে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপনি বলেছেন রায় পর্যালোচনা হচ্ছে ও এগিয়েছে—সর্বশেষ কী অবস্থা? এ প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সর্বশেষ যেটি বলেছি সেটিই। এখন অ্যাটর্নি জেনারেলকে আমি যখন চিঠি দেব, তখনই বোধ হয় উনি মনে করবেন যে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে রিভিউ দাখিল করার সরকারের সিদ্ধান্ত। সেটি যদি হয়, তাহলে সে ব্যবস্থা করা হবে। রায়টা হচ্ছে ৭৯৯ পাতার। আমাদের প্রত্যেকটা পাতা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করতে হচ্ছে, যে আমরা কী কী বাদ চাই। ঢালাওভাবে আমরা যদি এখন বলে দিই, শেষ পর্যন্ত এটা আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। সে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আমাদের যে নিবিড় পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আমরা নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলব।’
নিবিড় পরীক্ষা শেষে বলবেন না এর মাঝামাঝি সময়ে বলবেন, এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের যে অবজারভেশন, সেটি নিশ্চয়ই লিখিতভাবে যাঁরা রিভিউ তৈরি করবেন, আমরা তাঁদের কাছে পাঠাব, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব, তখনই আমাদের পিটিশনের মধ্যে থাকবে।’
পর্যালোচনা শেষেই বলবেন? এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত বাংলাদেশ পদক্ষেপ নেবে কি না, এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) এখানে আশ্রয় দিচ্ছি। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এই পর্যায়ে যেতে পারে না, যেখানে জনগণকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা; তাদের অবস্থান ও দেশ থেকে বিতাড়িত করা। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথেষ্ট কাজ করছে এবং যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। এটি আপাতত চালিয়ে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে তারাই (রোহিঙ্গা) যদি মনে করেন, তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যেতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেটি করব, সেটি হচ্ছে এই যে কনফ্লিক্টের (দ্বন্দ্ব) একটি শান্তিপূর্ণ অবসানে আমরা চেষ্টা করব।’
শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া ও বসবাসের ক্ষেত্রে আইন বা নীতিমালার বিষয়ে করা অপর প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একটি শিশুর বাবা-মা-ভাই বোন সবাইকে হত্যা করে তাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আইনের কি প্রয়োজন আছে? ১৯৭১ সালে ভারতে কোনো আইন ছিল না, আমাদের যখন তারা সাহায্য করেছিল এবং শরণার্থী হিসেবে আমাদের যখন রেখেছিল। ঠিক সেই মানসিকতা নিয়ে আমরা তাদেরকে এখানে যতটুকু সুবিধা তাদের দেওয়া উচিত, আমরা দেব।’
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বক্তব্য দেন। নবনিযুক্ত ৪৫ জন সহকারী জজকে দুই মাসব্যাপী ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে আয়োজকেরা জানান।