রোহিঙ্গাদের কষ্ট বাড়াল বৃষ্টি

রোববারের বৃষ্টি বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ছবিটি রোববার উখিয়া উপজেলার থ্যাংখালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম
রোববারের বৃষ্টি বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ছবিটি রোববার উখিয়া উপজেলার থ্যাংখালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম

টিপটিপ বৃষ্টি টেকনাফে প্রায় প্রতিদিনই হয়। দিনের শুরুতে অথবা শেষে। আজ রোববার সকাল থেকেই বেগ বেড়েছিল বৃষ্টির। বিশেষ করে উখিয়া উপজেলায় বেশ ভারী বৃষ্টিই হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গাদের অনেকেই তাদের জন্য তৈরি করা উখিয়া ও টেকনাফের নতুন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে না গিয়ে বসে ছিল সড়কের দুই পাশে। উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের গতকাল সড়কে পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বৃষ্টির মধ্যেই ঝুপড়ি বস্তি ভেঙে পাহাড়ের ঢালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে কাদাপানিতে পিচ্ছিল পথে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা চলতে-ফিরতে সমস্যায় পড়েন।

মিয়ানমারের মংডুর মংলাপাড়া এলাকা থেকে দিল মোহাম্মদ আটজন সদস্য নিয়ে আজ সকালে টেকনাফের গোলারচর আসেন। সেখান থেকে দুপুরে এসে পৌঁছান টেকনাফ সদরে। আজ দুপুরে যখন এই পরিবারটির দেখা মেলে, তখন তাদের কাছে কোনো ছাতা ছিল না। বৃষ্টিতে ভিজছিল।

রোহিঙ্গাদের এসব নতুন আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে উখিয়ার থাইংখালি, বাগগুনা ও টেকনাফের পুটিবুনিয়ায়। উখিয়ার কুতুপালং এবং টেকনাফের লেদা ও নয়াপাড়ার পুরোনো আশ্রয়কেন্দ্রেও উঠেছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়াও এই দুই উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাঝারি ও ছোট আকারের অনেকে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে উঠেছে। এসব নতুন বস্তিতে এখনো শক্তপোক্ত অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। অসমতল মাটির ওপরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার ওপর ত্রিপল বা লবণ খেতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সিট বিছিয়ে ছাউনি করা হয়েছে। এই ছাউনি হালকা ছিটেফোঁটা বৃষ্টির পানি আটকাতে পারলেও একটু ভারী বর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপযোগী নয়। সে কারণে গতকাল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অনেক ঝুপড়ি ঘরেই পানি প্রবেশ করেছে।

উখিয়ার থাইংখালি, বালুখালি ও কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্রে এখন নতুন আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। টেকনাফেও নতুনদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় লাখ। সব মিলিয়ে প্রায় ছয় লাখ নতুন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। এখন টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের বঙ্গোপসাগর প্রান্ত দিয়ে নৌকায় করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসছে।

নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসনসংকটের পাশাপাশি খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, শৌচাগার ও চিকিৎসার সংকট দিনে দিনে বেড়েই চলছে। আচমকা এত বিপুল মানুষের স্রোত আসায় তাদের সামাল দেওয়ার কোনো পূর্বপ্রস্তুতি প্রশাসনের ছিল না। এসব মানুষের আশ্রয় ও অন্যান্য জীবনোপকরণ সরবরাহ করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকেই যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

রোববারের বৃষ্টি বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সড়কে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে অনেককে। ছবিটি রোববার উখিয়া উপজেলার থ্যাংখালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম
রোববারের বৃষ্টি বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সড়কে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে অনেককে। ছবিটি রোববার উখিয়া উপজেলার থ্যাংখালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম

সরেজমিনে উখিয়া ও টেকনাফের নতুন-পুরোনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো কেন্দ্রে আগে যে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা ছিল, নতুন আসা লোকের চাপে তা নাজুক হয়ে পড়েছে। আর নতুন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাই করা যায়নি। একই অবস্থা শৌচাগারের ক্ষেত্রেও।

বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিশেষ করে শিশুরা ব্যাপকভাবে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে বা ভেজা মাটির ওপর শুয়ে থেকে শিশু ও বয়স্ক অনেকেই সর্দি-জ্বরে রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কিছু কিছু মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। তবে লাখ লাখ মানুষের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়।