সাংসদকে বয়কটের ঘোষণা উপজেলা আ.লীগের!

নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে তাঁকে সাংগঠনিকভাবে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী সাংসদকে বয়কটের ঘোষণা দেন। উপস্থিত সব নেতা-কর্মী হাত উঁচিয়ে এতে সমর্থন দেন। গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার’ চত্বরে এ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়।

অবশ্য সাংসদ আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দলের কিছু নেতা তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করছেন। তাঁকে বয়কট করার বিষয়টি সংগঠন পরিপন্থী।

আজকের সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল বারী বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় পৌরসভা, ছয়টি ইউনিয়ন এবং ৬৭টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন। কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, সাংসদ আবদুল কুদ্দুস জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থেকেও সাংগঠনিক পরিপন্থী কাজ করে চলছেন; আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন করছেন। সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সাংসদ তাঁর স্বজনদের প্রাধান্য দিচ্ছেন এবং নিজে সুবিধাভোগ করছেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। উপরন্তু তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।

বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, সাংসদ তাঁর ছেলেকে সোলার–বাণিজ্য এবং মেয়েকে দিয়ে নানা ধরনের নিয়োগ–বাণিজ্য করছেন। এসব নিয়োগ-বাণিজ্যে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা সাংসদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভোটে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা একক প্রার্থী মনোনীত করলেও সাংসদ আবদুল কুদ্দুস ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি হওয়ার সুবাদে তাঁর মেয়ে প্রভাব খাঁটিয়ে কেন্দ্র থেকে ওই প্রার্থীদের নাম বদলে তাঁদের অনুগত ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন এনে দেন। এ কারণেও তৃণমূল আওয়ামী লীগের সব সংগঠন সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

সভায় আওয়ামী লীগের নেতারা আগামী সংসদ নির্বাচনে সাংসদ আবদুল কুদ্দুসকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তোলেন।

বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী, জাতীয় শ্রমিক লীগের উপজেলা সভাপতি মো. জয়েন উদ্দিন, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল আজিজ সরকার, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাসুদ সরকার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলাল শেখ ও পৌর যুবলীগের সভাপতি আবু তাহের প্রমুখ।