'জোর প্রচেষ্টা' চালাচ্ছে পুলিশ, তবু খোঁজ নেই নিখোঁজদের

অনিরুদ্ধ রায়, সৈয়দ সাদাত ও ইশরাক আহমেদ
অনিরুদ্ধ রায়, সৈয়দ সাদাত ও ইশরাক আহমেদ

দেড় মাসেও নিখোঁজ চার ব্যক্তির সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ‘জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত’ রেখেছে বলে দাবি তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা গত আগস্টের ২২ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে নিখোঁজ হন।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় ও কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহমেদ।
গত ২২ আগস্ট বনানী ফ্লাইওভারের নিচ থেকে অপহৃত হন সাদাত আহমেদ। গাড়ি থেকে নামিয়ে সাদাপোশাকের কয়েকজন তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িতে সাদাতের ছেলেও ছিল। গাড়িচালক ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। সাদাত আহমেদের স্ত্রী এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন।
ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি।’ কাউকে সন্দেহ করছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার কাউকে সন্দেহ করার কথা আমাদের জানায়নি। তারা যোগাযোগও করছে না।’
২৭ আগস্ট রাতে নিখোঁজ হন কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান। ওই রাতে তিনি ও ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া একসঙ্গে পার্টি অফিস থেকে বের হন। দল দুটির অফিস একই ভবনে। দুজন গল্প করতে করতে নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে আসেন। এরপর যে যাঁর বাড়ির দিকে যান।
গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিনুর রহমানকে কেউ হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, কেউ তাঁকে অনুসরণ করছে—এমন কোনো কথা শুনিনি। হঠাৎ করেই তিনি নিখোঁজ হন।’ এ ঘটনায় পল্টন থানায় আমিনুর রহমানের ভাই জিডি করেন।
এ বিষয়ে জানতে পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী শহিদুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে গুলশান অ্যাভিনিউ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ২৭ আগস্ট। সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করা হয়েছে, বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বের হন অনিরুদ্ধ রায়। রুপালি রঙের একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। মাইক্রোবাস থেকে তিনজন বেরিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়।
অনিরুদ্ধ রায়কে উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য তাঁর কানাডাপ্রবাসী স্বজনেরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে চিঠি দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনিরুদ্ধ রায়কে খুঁজে পেতে জোর প্রচেষ্টা চলছে। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়নি।’
অনিরুদ্ধ রায়ের স্ত্রী শাশ্বতী রায় বলেন, ‘পুলিশ কেবল বলে খুঁজছি, পাচ্ছি না।’
একই মন্তব্য করেছেন কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্র ইশরাক আহমেদের বাবা মো. জামালউদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই বলছেন দেখছি। কিন্তু কোনো খোঁজ কেউ দিতে পারছে না।’
গত ২৬ আগস্ট ইশরাক বন্ধুদের নিয়ে ধানমন্ডির স্টার কাবাব এলাকায় খেতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। আর ফেরেননি। ইশরাক জুনে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। ধানমন্ডি থানা গতকাল পর্যন্ত ইশরাকের কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।