জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী মিশন এখন বাংলাদেশে

বৈরী আবহাওয়া। পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার। তাই ঘর তৈরিতে ব্যস্ত সদ্য আসা রোহিঙ্গারা। গতকাল বিকেলে উখিয়ার বালুখালীর শরণার্থী শিবিরে l ছবি: সাইফুল ইসলাম
বৈরী আবহাওয়া। পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার। তাই ঘর তৈরিতে ব্যস্ত সদ্য আসা রোহিঙ্গারা। গতকাল বিকেলে উখিয়ার বালুখালীর শরণার্থী শিবিরে l ছবি: সাইফুল ইসলাম

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তদন্তে বাংলাদেশ সফরে এসেছে জাতিসংঘের নিরপেক্ষ সত্যানুসন্ধানী দল। তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল আগামীকাল সোমবার থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করবে। এ বছরের মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৪তম অধিবেশনে ইন্দোনেশিয়ার মারজুকি দারুসমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এ দলটি গঠন করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের নিরপেক্ষ সত্যানুসন্ধানী দলের সদস্য মারজুকি দারুসমান ও শ্রীলঙ্কার রাধিকা কুমরাস্বামী গতকাল ঢাকায় পৌঁছেছেন। অন্য সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টোফার ডমিনিক সিডোটি আজ রোববার ঢাকায় আসবেন। সোমবার থেকে প্রতিনিধিদলটি মাঠপর্যায়ে কাজ করবে। এরপর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবে। জেনেভায় ফিরে প্রতিনিধিদলটি একটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক নিধনযজ্ঞের পর এ বছরের মার্চে জাতিসংঘের নিরপেক্ষ সত্যানুসন্ধানী দলটি গঠন করা হয়েছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সত্যানুসন্ধানী দলটি মিয়ানমার গিয়ে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হারে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযোগের তদন্ত করবে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ কয়েকবার অনুরোধ জানানোর পরও দলটিকে মিয়ানমার সে দেশে ঢুকতে দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে এ বছরের ২৫ আগস্টের পর রাখাইনে নতুন করে আবার দমন অভিযান শুরু হয়। ফলে এবার দলটিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)।

জাতিসংঘের নিরপেক্ষ সত্যানুসন্ধানী দলের বাংলাদেশ সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ মাসের ১১ তারিখ ওএইচসিএইচআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট তল্লাশিচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযান শুরু হলেও এই অভিযান ছিল পূর্বপরিকল্পিত। রোহিঙ্গাদের শুধু রাখাইন থেকে তাড়িয়ে দিতেই নয়, পুনরায় নিজেদের বাড়িতে ফেরা বন্ধ করতে তাদের ওপর নৃশংস আর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। রোহিঙ্গাদের ওপর নানামাত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করেছে রাখাইনের বৌদ্ধসম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খল অস্ত্রধারীরা।

২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৬৫ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ‘মিশন রিপোর্ট অব ওএইচসিএইচআর র‍্যাপিড রেসপন্স মিশন টু কক্সবাজার, বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

কাজে লাগবে না বিদেশি হস্তক্ষেপ’

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিদেশি হস্তক্ষেপ কাজে আসবে না। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক শাখার উপপ্রধান গুয়ো ইয়েঝাওয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল এ খবর জানায়। দলের কংগ্রেসের ফাঁকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চীনের অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে আলাদা কেন? জানতে চাইলে গুয়ো ইয়েঝাও বলেন, ‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর নীতি থেকে চীন এই অবস্থান নিয়েছে। অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের ফল কী হয়, সেটা আমরা সাম্প্রতিক ফলাফল থেকে দেখছি। আমরা এটা করব না।’ তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় চীন সে দেশে অস্থিতিশীলতা দেখতে চায় না।

বাংলাদেশকে চাপ নয়: অ্যামনেস্টি

রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব এককভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিষেধ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অপ্রত্যাশিত মানবিক সংকট সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।