গিনেস রেকর্ডসে বিডিসাইক্লিস্টস

দিবস ধরে বেরিয়ে পড়েন বিডিসাইক্লিস্ট দলের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
দিবস ধরে বেরিয়ে পড়েন বিডিসাইক্লিস্ট দলের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক পেজে নতুন একটা পোস্ট, একটা ঘোষণা এলেই হলো। মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে তরুণ-তরুণী। শুধু অনলাইন আর কি–বোর্ডে নয়, ঝড় তোলে ওরা রাস্তাতেও। দুই চাকা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। কখনো কখনো দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও।
সাইকেল অন্তঃপ্রাণ এই তরুণ-তরুণীরা একটি সংগঠনের সদস্য, নাম বিডিসাইক্লিস্টস (বিডিসি)। বছর সাতেক আগে শুরু হয়েছিল ওদের যাত্রা। সদস্য এখন লাখের ঘর ছাড়িয়ে গেছে।
নিজেদের আনন্দের জন্য ঘুরে বেড়ান না শুধু। সঙ্গে জনহিতকর কাজও করেন ওঁরা। তবে সে কাজ চলে নীরবে। এই তো কদিন আগে গাইবান্ধায় বন্যার্তদের কয়েক লাখ টাকার ত্রাণ দিয়ে এল বিডিসাইক্লিস্টসের একটা দল। এ ছাড়া আছে ৬৪ গুড অ্যাক্টস ও দুই ঈদে ‘শেয়ার দ্য জয়’র মতো কল্যাণকর কাজ। শুধু দেশ নয়। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বরেকর্ডও করেছে বিডিসি।

শুরুটা যেভাবে
অফিসে যেতে–আসতে যানজটে ত্যক্ত–বিরক্ত হয়ে সাইকেল ধরেছিলেন মোজাম্মেল হক। তাঁর দেখাদেখি অফিসের আরও অনেকে। ছুটির দিনে দল বেঁধে ঘুরতে বেরোতেন। সবাইকে একত্র করতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুললেন মোজাম্মেল। নিজের অজান্তেই একটি পরিবর্তনের জন্ম দিলেন, রচনা হয়েছিল বাংলাদেশে সাইকেল আন্দোলনের বড় সংগঠনটির। সাত বছর পর বিডিসাইক্লিস্টস আজ সাইক্লিং অ্যাকটিভ লাইফ স্টাইলে বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংগঠন।

দিবস ধরে চলে সাইকেল
শুক্রবার ছুটির দিনে সকালে সাইকেল নিয়ে ঢাকার অদূরে কোথাও বেরিয়ে পড়েন বিডিসির একঝাঁক তরুণ–তরুণী। এতে শারীরিক কসরতটা যেমন হয় তেমনি প্রকৃতির রূপটাও দেখা হয়। তবে ছুটির দিনটা সবাই মিলে উপভোগ করতেই এই আয়োজন, জানালেন বিডিসাইক্লিস্টসের অ্যাকটিভিস্ট কাজী ঝুনু। তাঁর মতে, সাইক্লিংকে উৎসাহ দিতেই বিভিন্ন দিবস ধরে রাইডের আয়োজন করেন তাঁরা। শুক্রবার সাইকেল চালানোটা বাইক ফ্রাইডে নামে পরিচিত।
আরেক দল আছে যারা একটু জোরসে ছোটে। তাদের জন্য শনিবারটা বরাদ্দ। সেই কাকডাকা ভোরে উঠে ঢাকার আশপাশে সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ঘুরে আসে। শনিবারের এই আয়োজনটার নাম জশিলা স্যাটার ডে। একই দিন সকালে মোহাম্মদপুরের স্ট্রাইকার ফিল্ডে চলে অন্য আয়োজন। হাতে ধরে সাইকেল চালানো শেখানো হয় সেখানে। তা–ও বিনা মূল্যে। এর নাম বিগেনারস লেসন। এখানে তরুণী ও শিশুরাই সাইকেল চালানো শিখতে আসে বেশি, জানালেন বিডিসির আরেক অ্যাকটিভিস্ট মির্জা সামস।
তবে বিডিসাইক্লিস্টসের বড় আয়োজন থাকে ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ ঘিরে।

দেশে নানা আয়োজন, যায় বিদেশেও
সাইক্লিংয়ের প্রসারে দেশে বেশ কিছু রেসের আয়োজন করেছে বিডিসি। এর মধ্যে আছে হাতিরঝিলে রেইস, কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে ১০০ কিলোমিটার রেইস, উত্তরায় রোড–এমটিবি–কিডস ক্যাটাগরির রেইস। ভিন্নধর্মী আয়োজন ছিল এমেজিং বাইসাইকেল রেইস। বুদ্ধিমত্তা, সাধারণ জ্ঞান, সাইক্লিং দক্ষতার অপূর্ব এক সমন্বয় ছিল সে রেইসে।
বিডিসাইক্লিস্টসের একটা ক্রীড়া শাখা আছে, নাম টিমবিডিসি। এরা একটু জোরেশোরে চালায়। সপ্তাহান্তে শুক্রবার সকালে দ্রুত গতিতে সাইকেল চালানোর অনুশীলন করে। অ্যামেচার সাইক্লিস্টদের এই দলটিও ঢাকায় প্রায়ই বিভিন্ন রেসের আয়োজন করে। আবার বিদেশের মাটিতেও রেস খেলতে যায়। চলতি বছরই তারা থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ঘুরে এসেছে। দিন কয়েক আগে ভারতে ‘এমটিবি হিমালয়া’ প্রতিযোগিতায় রেইস করে এসেছেন এই টিমবিডিসিরই তিন সদস্য।

এক সুতোয় গেঁথেছে ফেসবুক
বিডিসাইক্লিস্টসের ফেসবুক গ্রুপের হিসাব বলছে, সংগঠনের সদস্যসংখ্যা এখন এক লাখের বেশি। এর মধ্যে দুই মাস ধরে সক্রিয় সদস্য আছেন ৭৭ হাজার। গ্রুপ পেজে সারাক্ষণই নানা তথ্য শেয়ার করছেন সাইক্লিস্টরা—জানালেন, বিডিসির মডারেটর হাসান মাহমুদ।

বিশ্বরেকর্ড গড়লেন তাঁরা
অনেক পরিশ্রমের ফসল গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো। গত বছর বিজয় দিবসে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল বিডিসি। চলন্ত সাইকেলের দীর্ঘতম একক সারির বিশ্ব রেকর্ড গড়তে রাজধানীর তিন শ ফিটে জড়ো হয়েছিলেন আড়াই হাজার সাইক্লিস্ট। কয়েক দফা ট্রায়ালের মাধ্যমে বিজয়ের দিনে দেশের নামটাকে ঠিক ঠিক সমুজ্জ্বল করেছিলেন ১ হাজার ১৮৬ জন সাইক্লিস্ট মিলে। গড়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ড। কোনো স্পনসর ছাড়া একেবারে নিজেদের চেষ্টায়, নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে রেকর্ডটা গড়ে ছিল বিডিসাইক্লিস্টস। এখানেই সবচেয়ে বড় শক্তি সংগঠনটির, জানালেন সাইক্লিস্ট ফুয়াদ আহসান। তাঁর মতে, শুধু নিজেদের ভালো লাগার জায়গা আর সদিচ্ছা থাকলে অনেক অসম্ভবই সম্ভব। বিডিসি সেটা প্রমাণ করেছে অসংখ্যবার।

n আবুল হাসনাত: সাংবাদিক।