বুয়েট-মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা তাঁর

বুয়েট, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—এই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোসেন। ছবি: প্রথম আলো
বুয়েট, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—এই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

তাঁর বাবা একজন দরিদ্র তাঁত ব্যবসায়ী। নয়জনের টানাটানির সংসার। ভাত জোগানোই যেখানে কঠিন, সেখানে পড়াশোনা হয়তো কিছুটা বিলাসিতাই। তবুও এইচএসসি পর্যন্ত আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে টেনেটুনে চলেছেন ইয়ামিন হোসেন। এবার বুয়েট, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—এই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি। তবে ভর্তি হওয়ার টাকা নেই তাঁর কাছে।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার মুকুন্দগাতী গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোসেন (১৮)। ভর্তি ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। শনিবার কথা হয় ইয়ামিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বাবা সাইফুল ইসলাম তাঁতের ব্যবসা করে কোনোক্রমে সংসার চালান। মা রোকেয়া পারভীন গৃহিণী।

উপজেলার শ্যাম কিশোর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ইয়ামিন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঢাকায় পড়ালেখা চালাতে না পেরে ফিরে আসেন নিজ গ্রামের বেলকুচি কলেজে। সেখানে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় তাঁকে।

ইয়ামিন বলেন, ‘মামা শফিকুল ইসলামের আশা ছিল, আমি বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব। তাই সেটিই লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ঢাকায় আসি। এর জন্য মামা ৩০ হাজার টাকা ঋণও করেন।’

ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় মেডিকেলে ৩১২০, বুয়েটে ৮০৬ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ৮৯০ স্থান অধিকার করেছেন ইয়ামিন। বুয়েটে ভর্তি হওয়াই তাঁর ইচ্ছে। ৯ নভেম্বর বুয়েটে ভর্তির জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১১ নভেম্বর ভর্তি হওয়ার জন্য তারিখ ঠিক করা আছে।

কিন্তু ইয়ামিনের কাছে ভর্তির জন্য কোনো টাকা নেই। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে এখন কোনো টাকাপয়সা নেই। ভাবছি কীভাবে ভর্তি হব, ভর্তির পরই বা কীভাবে লেখাপড়ার খরচ জোগাব। আগের ঋণের কিস্তির টাকা মামা পরিশোধ করছেন। এখনো বাকি আছে। আমি একজন বড় প্রকৌশলী হতে চাই। জানি না আমার ইচ্ছা পূরণ হবে কি না।’

ইয়ামিনের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁতের ব্যবসা খারাপ হওয়ায় তাঁর ২০টি তাঁতের মধ্যে ১৮টিই বন্ধ হয়ে গেছে। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘ছেলের ভর্তির জন্য টাকা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আমার নাই। এত দিন মামাদের সহায়তায় সে লেখাপড়া চালিয়ে এসেছে। যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ান, তাহলে আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’

বেলকুচি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইয়ামিন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়ায় কলেজের বেতন মওকুফ করা হয়েছিল। ক্লাসে পড়ালেখায় তার অসাধারণ কৃতিত্ব ছিল। যদি সে ভালো সুযোগ পায়, তবে সফল হতে পারবে।


ইয়ামিন হোসেনকে সহায়তা করতে চাইলে:

বিকাশ নম্বর: ০১৯৬৯৩৭৩৫৮৭
ডাচ্‌-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর: ০১৯৬৯৩৭৩৫৮৭-১