নেতা-কর্মী চাঙা, সভা-সমাবেশে তৎপর বিএনপি

অনেক দিন রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ এবং মিছিল-মিটিংয়ে অনুপস্থিত বিএনপি। সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের মধ্য দিয়ে দল ও নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়েছেন বলে মনে করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক সভা–সমাবেশের কর্মসূচিও বাড়ছে দলটির। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে মাঠের নেতা–কর্মীরাও নড়েচড়ে বসেছেন।

বিভিন্ন সময়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করেও সরকারের অনুমোদনের অভাবে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম সংবাদ সম্মেলন এবং সেমিনারে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় চার বছর আগে বিএনপি সমাবেশ করেছিল। এরপর গত বছর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর একটি সমাবেশ করে দলটি। এরপর থেকে দলটির তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়নি। দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের সভা-সেমিনার এবং সংবাদ সম্মেলন ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি ছিল না। এতে তৃণমূল থেকে শুরু করে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে।

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে তিন মাস পর গত ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। সেদিন বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের বিপুল উপস্থিতি দেখা যায়। বিএনপির এই শোডাউন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হয়। এরপর রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য গত ২৮ অক্টোবর কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়া। তাঁর যাত্রাপথে রাস্তার পাশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল অনেক। নেতা–কর্মীদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এবং ৮ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণায় দলের নেতা–কর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ কি একাই রাজনীতি করবে? দিন-রাত তো তারাই সভা-সমাবেশ করছে। অন্য যারা আছে, তারা কি রাজনীতি করবে না? আওয়ামী লীগ কি চায় না বাংলাদেশে রাজনীতি বলে কিছু থাকুক? তিনি বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। সে হিসেবে শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরা না, দেশের মানুষ বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরে উজ্জীবিত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। সরকার যদি না চায়, তাহলে জনগণই সেটার জবাব দেবে।

বিএনপির মধ্যম পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমে একধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। বিএনপি করার কারণে এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকার কারণে অনেক নেতা-কর্মী মামলা–হামলার শিকার হয়েছেন। এর ফলে অনেকে আশাহত হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এবার দলের চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার পথে যে বিপুল জনসমাগম, তা দলের নেতা-কর্মীদের আশা জাগিয়েছে। তাঁরা চাইছেন, দলের চেয়ারপারসন এখন ঘনঘন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকুন। এতে দল সক্রিয় হবে এবং দলীয় কার্যক্রমে গতি আসবে।

দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, দলীয় চেয়ারপারসনের সফর নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি দেশের মানুষকেও উজ্জীবিত করেছে। কারণ, মানুষ এই সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। দেশে বাক্‌স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার নেই। এ কারণে মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, বিএনপি একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল। এই দলের ওপর মানুষের আশা-ভরসা থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জনপ্রিয়তা আছে, থাকবে। মানবিক কারণে তিনি কক্সবাজার সফর করলেও দলের নেতা-কর্মীরা চেয়ারপারসনের যাত্রাপথে যেভাবে তাঁদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন, তাতে দল এবং নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন।

নেতা-কর্মীদের নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলছেন, চেয়ারপারসনের সফরে দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। কেননা, বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এই দলের কাছে সাধারণ মানুষের অনেক আশা। মানুষে প্রত্যাশা পূরণে দলের কর্মীরা মাঠে নামছেন।