যে 'অনিবার্য কারণে' স্থগিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। আজ সোমবার কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকেরা মনে করছেন, উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনে যেতে না পারায় ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষক সমিতি বলছে, তারা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। সে ক্ষেত্রে উপাচার্যকে বাংলোতে বসেই ভর্তি পরীক্ষা কমিটির কার্যক্রম চালাতে হবে। আর উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা বলছেন, উপাচার্যকে দপ্তরে এনেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। এ অবস্থায় ১৭ ও ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। এ বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ৫৪ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী নাম নিবন্ধন করেছেন।

উপাচার্যের বাড়তি ভাতা নেওয়া, শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচার, প্রক্টরের পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবিতে গত ১৫ অক্টোবর থেকে আন্দোলনে রয়েছে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের কারণে গত ১৬ অক্টোবর থেকে উপাচার্য তাঁর দপ্তরে যেতে পারছেন না। তখন থেকেই শিক্ষক সমিতি তাঁর দপ্তরে তালা দিয়ে রেখেছে। উপাচার্য বাংলোতে বসে দাপ্তরিক কাজ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার বেলা ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের সভাপতিত্বে তাঁর বাংলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে কথা বলার জন্য বলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে বেলা তিনটায় আরেকটি বৈঠক হয়। তাতে শিক্ষক সমিতির নেতারা জানান, ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত আছেন। কিন্তু উপাচার্যকে তাঁর বাংলোতে বসেই ভর্তি পরীক্ষার কাজ করতে হবে। শিক্ষক সমিতির ওই বার্তা নিয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় উপাচার্যের বাংলোতে যান রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. আবু তাহের। সেখানে শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্তের বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি ১৭ ও ১৮ নভেম্বরের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। উপাচার্যকে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম তাঁর বাংলোতে বসেই করতে হবে।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটি ওএমআর শিট আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিল ১৩ নভেম্বর। এরপর ১৭ নভেম্বর থেকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এত অল্প সময়ের মধ্যে ওএমআর শিটে ত্রুটি আছে কি না, তা দেখাও সম্ভব নয়। ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের পেছনে এটিও একটি বড় কারণ। টেকনিক্যাল কমিটির ওই ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন সাধারণ শিক্ষকেরা।

রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি আমাকে বাংলাতে বসে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম চালানোর জন্য দাবি জানায়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা চালাতে হলে সমন্বয় সভা করতে হয়। গোপনীয় অনেক বিষয় থাকে। সেগুলো বাংলোতে বসে করা যায় না। তাই ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’