৩৯ ঘেরমালিকের বিরুদ্ধে মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় নবীনগরের পাগলা নদীতে থাকা ৩৯টি ঘেরের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত রোববার রাতে নবীগনর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালেহীন তানভির গাজী ও বীরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন এ মামলা করেন।

মামলায় কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দৌলতপুর, সীতারামপুর, পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, থানাকান্দি এবং বাড়াইল ইউনিয়নের গোসাইপুর ও রাধানগর গ্রামের ৩৯ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের আওতাধীন পাগলা নদীতে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত গৌরনগর ও একই ইউনিয়নের থানাকান্দি মৌজা এবং কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের তিতাস নদে কৃষ্ণনগর, দৌলতপুর ও সীতারামপুর মৌজায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গাছের ডালপালা, বাঁশ, কুচুরিপানা ইত্যাদি দিয়ে ঘের বা খৈউ দিয়েছেন স্থানীয় ৩৯ প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফলে নদীতে নৌকা চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গত ১ নভেম্বর কৃষ্ণনগর নৌকাঘাটে নৌকা ডুবে দুই জেএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর পরদিন ২ নভেম্বর নবীনগরের ইউএনওর মৌখিক নির্দেশে কৃষ্ণনগর ও বীরগাঁও ইউনিয়নে মাইকযোগে অবৈধভাবে নদীতে মাছ ধরার সব ঘের সরিয়ে নিতে প্রচারণা চলানো হয়। উপজেলার বীরগাঁও ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নসংলগ্ন তিতাস ও পাগলা নদীতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ঘের তৈরি করা দুই ইউনিয়নের ৩৯ ব্যক্তিকে ঘের সরিয়ে নিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এই ৩৯ ব্যক্তি এখনো নদী থেকে তাঁদের অবৈধ মাছের ঘের সরাননি। এ ঘটনায় বীরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন তাঁদের আসামি করে নবীনগর থানায় মামলা করেন।

ইউএনও ও তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য তানভির গাজী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঘেরের কারণে এই নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, ‘নৌদুর্ঘটনার কারণে পরীক্ষা দিতে না পারা সবাই যেন নতুন করে পরীক্ষা দিতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগির এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।’

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদুল ইসলাম গতকাল সোমবার বলেন, তদন্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। খুব কম সময়ের মধ্যেই জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

১ নভেম্বর নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকায় পাগলা নদীতে দেড় শতাধিক জেএসসি পরীক্ষার্থীকে বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের জেএসসি পরীক্ষার্থী নাদিরা আক্তার ও সোনিয়া আক্তার মারা যায়। কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রর পরীক্ষার্থী ছিল তারা।