রকিব মিছিলে, পুলিশ খুঁজে পায় না!
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেসকোর ঐতিহ্যের দলিলে স্থান পাওয়া নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আনন্দ মিছিল করে সিলেট মহানগর হকার্স লীগ। ব্যানারের ঠিক সামনে একজনই ছিলেন। তিনি আবদুর রকিব। সিলেট নগরের ফুটপাতে অবৈধ ব্যবসার দায়ে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গতকাল মিছিল করলেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালত থেকে রকিবসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় গত ১৯ অক্টোবর। এর মধ্যে ছয়জনের পরোয়ানা পরদিন সিলেট কোতোয়ালি থানায় পৌঁছায়। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পরোয়ানা তামিল করার নির্দেশনা ছিল ৫ নভেম্বর। গতকাল নগরের শিবগঞ্জ এলাকা থেকে হকার্স কল্যাণ সমবায় সমিতির সহসভাপতি মোখলেছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলেও রকিবকে নির্বিঘ্নে মিছিল করতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন দাবি করেন, মিছিলের সময় রকিবের অবস্থান সম্পর্কে কেউ জানায়নি, এ জন্য গ্রেপ্তার করতে পারছেন না। তবে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি দাবি করেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসেন গত ৮ মে এক সভার মাধ্যমে সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দপ্তরের সম্মুখভাগ ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনার দখলে চলে যাওয়ায় প্রতিকার চেয়ে সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে একটি আবেদন করেন। জনস্বার্থমূলক এ আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক ২৫ মে এক আদেশে ৮ জুনের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের তালিকা দাখিল করতে সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেনকে সদস্যসচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় তিন মাস পার হওয়ার পরও এ–সংক্রান্ত কোনো বিষয় আদালতকে অবহিত না করায় গত ৮ অক্টোবর আরেকটি আদেশে মেয়র-ওসিকে আদালতে হাজির হয়ে তালিকা দাখিলের নির্দেশ জারি হয়। ১৬ অক্টোবর সোমবার মেয়রসহ কোতোয়ালি থানার ওসি আদালতে হাজির হয়ে ৩৮ জনের তালিকা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর রকিবের ছবিসংবলিত একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। এ তালিকা থেকেই গত ১৯ অক্টোবর আদালত ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর মধ্যে প্রথম নামটি ছিল রকিবের।
মুঠোফোনে রকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন। তবে পরিচয় দেওয়ার পর কথা বলার একপর্যায়ে ফোন কেটে দেন। এরপর আরও কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
রকিবের সহযোগীরাই স্বীকার করেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর তাঁকে আর ফুটপাতে আগের মতো দেখা যায়নি। গতকাল মিছিলের অগ্রভাগে প্রথম তাঁকে দেখেছেন অনেকে। পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে থাকার পরও পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় বিস্মিত হয়েছেন তাঁরা।