৭ মার্চ স্বীকৃতির উদ্যাপন ২৫ নভেম্বর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ২৫ নভেম্বর দেশব্যাপী আনন্দ উৎসব উদ্‌যাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সদস্যরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আজ শুক্রবার বাসসকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া জাতির জন্য তথা এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য একটি বিরাট অর্জন। বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে এর অন্তর্ভুক্তির মানে হচ্ছে চিরস্থায়ী বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা।’
কামাল আবদুল নাসের বলেন, এই বিরাট অর্জন উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ২৫ নভেম্বর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের তথা সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে দেশব্যাপী আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

মুখ্য সচিব বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবহিত করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই উদ্‌যাপন শুধু উৎসবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটা হবে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি, যাতে শিক্ষার্থীরা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারে।

এই স্বীকৃতিকে বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য বিশাল গৌরব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাইকে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানা উচিত। কামাল আবদুল নাসের বলেন, তাদের জানা উচিত ‘মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার’ কী এবং বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য কী। তিনি আরও বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করার লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, জাতির গৌরব এই ভাষণটি প্রদর্শনের জন্য সব পাবলিক লাইব্রেরিতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি রাখা হবে।

মুখ্য সচিব বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে দেশজুড়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্টের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, ‘ভাষণটি বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচার করা হবে, যাতে বিশ্ববাসী এ সম্পর্কে জানতে পারে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে উৎসাহিত করব।’
গত ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে (ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্বে প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্যারিসে ইউনেসকোর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বুকোভা এ ঘোষণা দেন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রার স্মৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এটি বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত তাৎপর্যপূর্ণ প্রামাণ্য দলিলগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত একটি তালিকা। আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত এই তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যগত প্রামাণ্য দলিলগুলোর সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কমিটি (আইএসি) কোনো প্রামাণ্য দলিল বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে রেজিস্ট্রার হবে কি না বা যোগ্য কি না, তা বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকে। এই কমিটি এ বছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর আয়োজিত সংগঠনটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক রেজিস্টার্ড মেমোরি হিসেবে মনোনীত করে।
বর্তমানে মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে সব মহাদেশ থেকে ৪২৭টি প্রামাণ্য দলিল ও সংগ্রহ তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাষণটি স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রস্তুতির দিকে ঝুঁকে পড়তেও উৎসাহিত করে।
এটি মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।