পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া হচ্ছে

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় কর্মকর্তাসহ পুলিশের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার বাদী গতকাল শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।

শহরের মধু সড়কে যশোর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে মামলার বাদী আয়েশা বেগম লিখিত বক্তব্য পড়েন। তিনি বলেন, ‘গত সোমবার গভীর রাতে আমার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করতে গিয়ে টাকা এবং স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা করে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের তথ্যদাতা ফজলুর রহমান আমার ছেলে জাহিদুলকে গত বৃহস্পতিবার রাতে থানার মোড়ে ডেকে মামলা তুলে না নিলে মাদক এবং অস্ত্র মামলায় ঢোকানো হবে হুমকি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আমি নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’ সংবাদ সম্মেলনে এলাকার ৫০-৬০ জন বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন।

মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটন্ডা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে সোমবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজাহিদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশরাফুল, এএসআই জাহাঙ্গীর আলম, কনস্টেবল মো. সালাউদ্দীন, গাড়িচালক মো. মজনু এবং পুলিশের তথ্যদাতা বাগদা গ্রামের ফজলুর রহমান যান। তাঁরা জাহাঙ্গীরের খোঁজ করেন। এ সময় জাহাঙ্গীরের মা আয়েশা বেগম (৫৮) দরজা খুললে তাঁকে তাঁর ছেলেকে ডেকে দিতে বলা হয়। পুলিশ আরও বলে, তাঁর ঘরে মাদক এবং অস্ত্র আছে। তাই তল্লাশি করা হবে। তল্লাশির পরোয়ানা (সার্চ ওয়ারেন্ট) আছে কি না, জানতে চাইলে পুলিশের কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আয়েশাকে মারধর করেন। চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেন। পেটে লাথিও মারেন। এ সময় জাহাঙ্গীর বেরিয়ে আসেন। পরে পুলিশ জাহাঙ্গীরের ঘরে ঢুকে তল্লাশি করে। কিছু না পেয়ে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় এ নিয়ে কোনো ঝামেলা করলে সব ভাইয়ের নামে মামলা দেওয়া হবে এবং ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে জাহাঙ্গীর ঘরে ঢুকে দেখেন শোকেসে ভেতরে রাখা অপর ভাই জাহিদুল ইসলামের মোটরসাইকেল বিক্রির ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং বাক্সের ভেতর থেকে স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় আয়েশা বেগম বাদী হয়ে যশোর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলি আদালতে (কেশবপুর) গত বুধবার মামলা করেন। এতে কেশবপুর থানার এসআই মুজাহিদ, এএসআই আশরাফুল, এএসআই জাহাঙ্গীর, কনস্টেবল মো. সালাউদ্দীন, গাড়িচালক মো. মজনু এবং পুলিশের তথ্যদাতা ফজলুর রহমানকে আসামি করা হয়। আইনজীবী কোমার উদ্দীন কামরুল বলেন, বিচারক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশের তথ্যদাতা ফজলুর রহমান মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকি দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই।’