সাংসদের সঙ্গে মঞ্চে আসামি

পাথর উত্তোলনে অবৈধ বোমা মেশিন ব্যবহার করে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে গত মঙ্গলবার মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এর দুদিন পর সরকারদলীয় স্থানীয় সাংসদ ইমরান আহমদের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেল তাঁকে। এ সময় পুলিশও উপস্থিত ছিল।

ওই আসামি হলেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম মিয়া। পরিবেশ অধিদপ্তরের করা মামলাটিতে তাঁর ভাই বিলাল মিয়া ও তাঁদের ১৫ জন আত্মীয়সহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মিসভায় সাংসদ ইমরান আহমদের সঙ্গে শামীমও বক্তব্য দেন। পরে সাংসদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানেও মঞ্চে ছিলেন তিনি।

এ দুটো অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে শামীম তাঁর ফেসবুকে ছবিগুলো আপলোড করেন। এতে দুটো অনুষ্ঠানের আটটি ছবি দেখা যায়। এর মধ্যে চারটিতে শামীম বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বাকি দুটোয় মঞ্চে সাংসদ ইমরানের ঠিক পেছনে দাঁড়ানো।

এ দুটো অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন। তিনি সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলিও (এপিপি)।

আসামির এভাবে প্রকাশ্যে উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কর্মিসভায় তাঁর (শামীমের) উপস্থিতি নিয়ে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু বলতে পারব না। তবে আইনজীবী হিসেবে বলছি, তাঁর এ রকম উপস্থিতি ঠিক হয়নি। পুলিশ এ ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারত।’

কোম্পানীগঞ্জ থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, সাংসদের তিনটি অনুষ্ঠানে পুলিশের একটি দল ছিল। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি অনুষ্ঠান হওয়ায় সেখানে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুর রহমান খানও ছিলেন। শামীমকে গ্রেপ্তারে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ওসি ফোন ধরেননি।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি যে পরিবেশ আইনে মামলা থানায় নথিভুক্ত হলেও তদন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরই করে। তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আসে। তবু বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের একজন কর্মকর্তা বলেন, আইন সব ক্ষেত্রেই সমান। একজন আসামি অভিযুক্ত হলেই পুলিশ গ্রেপ্তার করার এখতিয়ার রাখে। এখানে সদিচ্ছার অভাব আছে। আসামিও হয়তো সাংসদের সঙ্গে থেকে নিজের ক্ষমতা দেখালেন।

শামীমের বাবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাছির। মামলা দায়েরের খবর পেয়ে গত বুধবার তাঁদের পক্ষের শ্রমিকেরা ভোলাগঞ্জ মোড়ে ট্রাক ফেলে রাখেন। এ কারণে পুরো দিন সিলেট-কোম্পানীগঞ্জসহ তিনটি সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন জরুরি বৈঠকে বসলে সেখানে শামীমের বাবা সড়ক সচলের আশ্বাস দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সাংসদ ইমরান আহমদের মুঠোফোনে গতকাল সন্ধ্যার পর চারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।