সান্ধ্য কোর্স চলবে, মানবে না শিক্ষার্থীরা

বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ চত্বরে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী
বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ চত্বরে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসন পরীক্ষাসহ নানা খাতে বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে। তবে বিভিন্ন বিভাগে চালু সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহার ও বিভিন্ন বিভাগে চালু হওয়া সান্ধ্য কোর্স বন্ধের দাবি মেনে না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এদিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকেরা ‘আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য’ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ শনিবার বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েক দিন ধরে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে। আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কোনোভাবেই নস্যাত্ হতে দিতে চাই না। এ কারণে আমরা সব প্রকার বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন স্থগিত করছি। পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সান্ধ্য কোর্স সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালুর সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক। রাজশাহীসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে।’ সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কোর্স নিয়মিত কোর্সকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করবে না, এমন নিশ্চয়তা নিয়েই বিভাগগুলোতে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মাস্টার্স পর্যায়ে সান্ধ্য কোর্স চালুর দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়েরও সিদ্ধান্ত ছিল। বর্তমান প্রশাসন শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে।’

বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ চত্বরে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী
বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ চত্বরে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন। ছবি: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বর্ধিত ফি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্ধিত ফি কার্যকর স্থগিত করেছে। কিন্তু কিছুদিন পর এই ফি যে তাঁরা আবার চালু করবে না, তার নিশ্চয়তা দেয়নি। আর সান্ধ্য কোর্স বন্ধের আমাদের মূল দাবি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা চাই বর্ধিত ফি স্থগিত নয়, প্রত্যাহার করা হোক। পাশাপাশি চালু করা সব সান্ধ্য কোর্সও স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, আগামীকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট পালন করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ মাঠে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাসহ নানা খাতে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বিভিন্ন বিভাগে চালু হওয়া সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট চলছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ‘সাবাস বাংলাদেশ’ মাঠে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলের ছাত্রীরা মুন্নুজান হলের সামনে জড়ো হন। পরে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রীর অংশগ্রহণে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম, আমীর আলী, আবদুল লতিফ, শেরেবাংলা, মাদার বকশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের অবিরাম স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।

সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ মাঠে সমবেত হতে শুরু করেন। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সেখানে সকাল থেকেই সমাবেশ চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ও সবগুলো ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ‘বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বাণিজ্যিক সান্ধ্য কোর্সবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার থেকে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত: ‘আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য’র প্রতিবাদে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকেরা। দুপুরে অনুষদের ডিন অধ্যাপক আনসারউদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে যখন-তখন অশোভন আচরণ করছে। তাই নিরুপায় হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকেরা ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত  নিয়েছেন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগে থেকেই আইন ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু আছে। প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রশাসন ভবন ঘেরাও করার পর বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট করছে শিক্ষার্থীরা।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সংবাদ সম্মেলন: সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে চালু করা সান্ধ্য কোর্স সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে যোগ্য করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। এ কোর্স অনুষদের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। পাশাপাশি এই কোর্সের মাধ্যমে অর্জিত আয়ের একটা বড় অংশ বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। তাই এ কোর্স বন্ধের কোনো প্রশ্নই আসে না। সংবাদ সম্মেলনে অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।