পাসপোর্ট সেবায় ৭১ ভাগ মানুষ দুর্নীতির শিকার

বরিশালে পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের ৭১ দশমিক ১ ভাগ অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ সেবাগ্রহীতা বিধিবহির্ভূত অর্থ প্রদান, পুলিশি তদন্তের নামে হয়রানি এবং দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। পাসপোর্ট সেবায় হয়রানি-দুর্নীতি কমাতে পুলিশি তদন্ত বাতিল প্রয়োজন।

বরিশালে পাসপোর্ট সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের বিডিএস মিলনায়তনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ে পাসপোর্ট সেবা গ্রহণে ৭১ দশমিক ১ ভাগ অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৫৪ ভাগ ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেওয়া, ৩২ দশমিক ৩ ভাগ সেবাগ্রহীতা বিলম্বে পাসপোর্ট প্রাপ্তি, শূন্য দশমিক ৬ ভাগ অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদক মো. আলী হোসেন তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, পাসপোর্ট সেবায় নির্ধারিত ফির বাইরে গড়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮৫৪ টাকা অর্থ দিতে হচ্ছে। ৮৯ দশমিক ৪ ভাগ সেবাগ্রহীতার অভিযোগ, পুলিশি তদন্তের নামে আবেদনকারীকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। গড়ে প্রত্যেক পাসপোর্ট গ্রহীতার কাছ থেকে ৮৯৬ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিশেষ করে অযথা ত্রুটি বের করার চেষ্টা, জঙ্গি কার্যক্রম কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান কিংবা থানায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে। তারপরও গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দালালদের সহযোগিতা না নিলে কর্তৃপক্ষ আবেদন জমা নেয় না। নানা অজুহাতে ভুল ধরে দালালদের কাছে যেতে বাধ্য করা হয়। বরিশাল পাসপোর্ট কার্যালয়ে আসা সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৩ জনকে দালালের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। দালালদের একটি অংশ পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। পাসপোর্ট গ্রহীতাদের কাছ থেকে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থের একাংশ পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ এবং আঞ্চলিক নামধারী কিছু সাংবাদিকের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়।

টিআইবির উদ্যোগে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন টিআইবির গবেষণা বিভাগে কর্মকর্তা মো. শাহনূর রহমান, সনাকের সদস্য শিক্ষাবিদ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল, অধ্যাপক শাহ সাজেদা, নারীনেত্রী নূরজাহান বেগম প্রমুখ।