'প্রথম আলো পড়া দায়িত্ব বলে মনে হয়'

রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। ছবি: প্রথম আলো

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, প্রতিদিন সকালে উঠে প্রথম আলো পড়াকে দায়িত্ব বলে মনে হয়। তিনি বলেছেন, ‘সাহিত্য ও ভাষা নির্মাণে প্রথম আলো যেন একটি স্তম্ভ হয়ে দাঁড়ায়, এটা আমাদের প্রত্যাশা।’

রাজশাহীতে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে এমন প্রত্যাশার কথা বলেন সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তিনি বলেছেন, প্রথম আলো আজ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান যখন হয়ে ওঠে, তখন তার প্রভাবও বাড়ে। খবরের কাগজ মানুষের অনেক কিছু ঠিক করে দেয়। সভ্যতাকে দেখার দৃষ্টি হচ্ছে মিডিয়া। ফলে এ বিষয়ে প্রথম আলোকে আরও সচেতন হতে হবে।

সুধী সমাবেশে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। ছবি: প্রথম আলো
সুধী সমাবেশে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুরে অবস্থিত কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পাঠকদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে আজকের অনুষ্ঠান ছিল ভরপুর। কেউ বলছিলেন, প্রথম আলো পড়া দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারও প্রশ্ন ছিল, পত্রিকার পাতাজুড়ে এত বিজ্ঞাপন কেন? কারও প্রত্যাশা, সমাজের ভালোর জন্য লড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কাহিনি আরও বেশি বেশি চাই। কেউবা দাবি জানাচ্ছিলেন আমার এলাকার খবর আরও বেশি, আরও বড় করে প্রকাশ করতে হবে।
প্রথম আলোর রাজশাহী অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপরেই বন্ধ হয়ে যায় মিলনায়তনের সব আলো। প্রজেক্টরের পর্দায় ভেসে ওঠে ময়মনসিংহের সাত সাহসী কিশোরীর ও তাদের সংগঠন ‘ঘাসফুল’ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। বাল্যবিবাহ ও ইভ টিজিং প্রতিরোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই সাত সাহসী। পিনপতন নীরবতায় সেই প্রামাণ্যচিত্র উপভোগ করেন অতিথিরা। প্রামাণ্যচিত্র শেষ হতেই দর্শকদের হাততালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর চলার পথে সবচেয়ে বড় শক্তি তার পাঠকেরা। আর আমরা এই পথচলায় অনুপ্রেরণা পাই বাঙালির ইতিহাস থেকে। বাঙালি জাতি জানে, যখন সবকিছু তছনছ হয়ে যায়, তখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।’ তিনি বলেন, প্রথম আলো তার যাত্রা শুরু করেছিল পেশাদার সাংবাদিকতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘ভালো এবং সৎ সাংবাদিকতা করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা পত্রিকা বের করছি। আমাদের কাছে পাঠকের যে প্রত্যাশা, তার সমন্বয় করেই প্রতিদিন পাঠকের সামনে হাজির হতে চাই।’ পাঠকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম আলো নতুন কলেবরে, ভিন্ন আঙ্গিকে হাজির হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

সুধী সমাবেশে পাঠকদের প্রশ্ন। ছবি: প্রথম আলো
সুধী সমাবেশে পাঠকদের প্রশ্ন। ছবি: প্রথম আলো

এরপর শুরু হয় মুক্ত আলোচনা। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের সঞ্চালনায় পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, সহকারী বার্তা সম্পাদক তুহিন সাইফুল্লাহ। প্রথম আলোকে প্রশংসার বন্যায় যেমন ভাসান উপস্থিত সুধীরা, তেমনি তুলে ধরেন প্রথম আলোর কাছে তাঁদের প্রত্যাশার কথা।
রাজশাহীর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবদুর রোকন মাসুম বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে প্রথম আলো গোলটেবিল বৈঠক করে। কিন্তু সেগুলো শুধু ঢাকাতেই। আমরা চাই আমাদের জেলাতেও এ ধরনের আয়োজন করা হোক।’ ব্যাংক কর্মকর্তা হাসনাত রনী বলেন, ‘আমাদের রাজশাহী নিয়ে যে খবর ছাপা হয়, তার অনেকগুলোই ই-পেপারে পাওয়া যায় না। এটি কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে।’ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম বলেন, ‘আমাদের সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদক। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাই।’ রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এস এম জার্জিস কাদিরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মাদক কীভাবে, কোন পথ দিয়ে ঢুকছে, তা নিয়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আমরা প্রত্যাশা করি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনার বাতিঘর। আমাদের প্রত্যাশা, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রথম আলো নিয়মিত একটি বিশেষ পাতা প্রকাশ করবে।’ রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, সরকারের সচিবেরা রাজশাহীকে নানা ক্ষেত্রে অবহেলিত করে রেখেছেন।

প্রশ্ন করছেন সুধী সমাবেশের এক অতিথি। ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন করছেন সুধী সমাবেশের এক অতিথি। ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আরও বেশি বেশি প্রতিবেদন প্রত্যাশা করে বক্তব্য দেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান। প্রবীণ সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, প্রথম আলো যে ভূমিকা পালন করছে, তা প্রশংসনীয়। তবে ঢাকার খবর যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়, ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার খবরও সেভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই খালি ‘নেগেটিভ’ নিউজ। কেউ খারাপ করলে সেই খবর ছাপলে কেউ ভালো করলে সেই খবরও ছাপতে হবে।’ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সমাজকে আলোর পথ দেখায় সংবাদপত্র। প্রথম আলো তাদের পুরোধা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা মোসতাফা খানম, মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন, রাজশাহী শহর সংবাদপত্র হকার্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক উদয় শংকর বিশ্বাস প্রমুখ।
সবার কথার শেষে বাজানো হয় বাঙালি জাতির আরেক প্রেরণা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গানটি বাজানো হয়। পর্দায় চলে গানের ভিডিও চিত্র। সবশেষে প্রথম আলোর শুভেচ্ছা উপহার নিয়ে ফিরে যান অতিথিরা।