বিএনপি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে নানা দিক তুলে ধরতেই বৃহস্পতিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে নানা দিক তুলে ধরতেই বৃহস্পতিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে। এবার আর তারা ভুল করবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, এমন কোনো দৈন্যদশা সরকারের হয়নি যে আগাম নির্বাচন দিতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন। কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

এটিএন বাংলার সাংবাদিক জ ই মামুনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক একটি দেশে যে দলগুলো গণতন্ত্র চর্চা করে, সেসব দলের নির্বাচনে আসা কর্তব্য। তবে কে নির্বাচনে আসবে আর কে নির্বাচনে আসবে না, সে ব্যাপারে সরকারের কিছু করণীয় নেই। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা নিয়ে সরকারের করণীয় বিষয়ে বারবার প্রশ্ন না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনা নিয়ে যদি আপনাদের এতই আগ্রহ থাকে, তাহলে তেলের টিন, ঘিয়ের টিন নিয়ে সেখানে যান। আমি অপাত্রে ঘি ঢালি না।’

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রশ্ন করেন, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরণডালা পাঠাতে হবে? একবার তাঁর (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঝাড়ি খেয়েছি, অপমানিত হয়েছি, আর ঝাড়ি খাওয়ার-অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে নেই। যাদের মধ্যে ভদ্রতাজ্ঞান নেই, তাদের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছে নেই।’ তিনি সাংবাদিকের উদ্দেশ করে বলেন, ‘এ ধরনের ছোটলোকিপনা যারা করে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন কোন মুখে। আমার ওপর আপনারা এত জুলুম করেন কেন? কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল নির্বাচন করবে না, তা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কী করার আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে মেজর জেনারেল বানিয়েছেন আমার বাবা। বউ নিয়ে তিনি আসতেন। আমাদের বাসার নিচে মোড়া পেতে বসে থাকতেন। তাঁকে আপনারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন, এটাই বহুদলীয় রাজনীতি?’ তিনি খালেদা জিয়ার সরকার প্রসঙ্গে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অনেককে হত্যা করেছে। তারপরও দেশের স্বার্থে তাদের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে না এসে আগুন-সন্ত্রাস করলে জনগণই জবাব দেবে। জনগণই ব্যবস্থা নেবে।

রোহিঙ্গাদের ফিরতে হবে

একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে আছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় কম্বোডিয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তারা বিষয়টি আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কাছে তুলবে। তবে বাংলাদেশের অবস্থান হলো, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।

প্রসঙ্গ খালেদা জিয়ার ক্ষমা ও অর্থ পাচার

‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ক্ষমা করেছেন নাকি ক্ষমা চাচ্ছেন, তা তো স্পষ্ট না। আমি এমন কোনো অপরাধ করিনি যে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা তো খালেদা জিয়ার চাওয়া উচিত।’
খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকার তো তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেখানে তাদের লোক ছিল। নয়জনকে ডিঙিয়ে মইন উদ্দিনকে সেনাপ্রধান করেছিলেন খালেদা জিয়া। প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তো তাদেরই লোক। তারাই মামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের লোকদের করা মামলা থেকে পলায়নপর মনোবৃত্তি কেন? আদালতে যাওয়ার জন্য যখনই বের হচ্ছেন, তখনই অঘটন ঘটছে। তাণ্ডব করছেন। বিদেশে বিভিন্ন দেশে তাদের অবৈধ টাকার বিষয়টি বের হয়ে আসছে। এগুলো তো বাংলাদেশ সরকার করছে না। কাজেই ক্ষমা তাদেরই চাওয়া উচিত।
সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার অর্থ নিয়ে এ দেশের গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি সৌদি আরবে সেই শপিং মলে বিনা পয়সায় শপিং করার জন্য কার্ড পেয়েছেন। দু-একটি ছাড়া কোনো পত্রিকা-টেলিভিশনে তো রিপোর্ট দেখলাম না। আপনাদের এত দুর্বলতা কিসের জন্য। আমার নাম এলে কী করতেন? সৎসাহস হলো না রিপোর্ট দেওয়ার।’ তিনি বলেন, যারা এত সম্পদের মালিক, তারা জানে মুখ বন্ধ কীভাবে করতে হয়। মুখে ‘রসগোল্লা’ ঢুকিয়েছে। আপনাদের (সাংবাদিকদের) প্রশ্নের উত্তর কেন দেব?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। তাঁকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আজ হোক কাল হোক তাঁকে ফিরতেই হবে। তিনি বলেন, তারেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

শত ফুল ফুটতে দিন

আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, অনেকে নির্বাচন করতে চাইবে, এটাই তো স্বাভাবিক। গণতন্ত্রে শত ফুল ফুটতে দিতে হবে। এর মধ্যে যে ফুলটি ভালো, যেটি সুন্দর, সেটাই তুলে আনা হবে। নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে এটা ভালো কথা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কীভাবে মনোনয়ন দেবে, সেটা সময় বলে দেবে। কী যোগ্যতা দেখবে, সেটা সবার সামনে বলার বিষয় নয়। প্রার্থী হতে চাওয়া সবার অধিকার।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, কোনো সাংসদই ‘রেড জোনে’ নেই। কেউই খারাপ অবস্থায় নেই। নির্বাচনে ‘ডেঞ্জার জোন’ আওয়ামী লীগের জন্য সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি পত্রিকা পড়ে দেশ চালাই না। মানুষের কথা ভেবে দেশ চালাই। মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ভোট দেব। আমিই স্লোগান করেছি, আমার ভোট আমি দেবে যাকে খুশি তাকে দেব। মানুষ ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব।’ তিনি বলেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, সংবাদ করতে গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের রোষানলে পড়তে হয় তাঁদের। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তাঁর পরিবারের আলাপ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় অ্যাটর্নি জেনারেলের রোষানলে পড়েন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, অ্যাটর্নি জেনারেলের?
পরে মোজাম্মেল বাবু বলেন, সরকারি দপ্তরগুলো সহযোগিতা না করলে কীভাবে রিপোর্ট হবে। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ ছাড়া সেখানে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সরকারের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।