বাবা বিএনপিতে, ছেলে আ. লীগে

বাবা-ছেলে দুজনই ব্যবসায়ী। এবার তাঁরা রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। এখানেও সফল হতে চান তাঁরা। তবে লক্ষ্য এক হলেও এবার বাবা আর ছেলের পথ আলাদা। বাবা মনিরুল ইসলাম চট্টগ্রামের মিরসরাই আসনে বিএনপি থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। একই আসন থেকে তাঁর একমাত্র ছেলে নিয়াজ মোরশেদও নির্বাচন করতে চান। তবে ছেলে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে এলাকায় জনসংযোগ করছেন। 

মনিরুল ইসলাম চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানটির অটোমোবাইলের ব্যবসা রয়েছে। ইউসুফ নামে তিনি ব্যবসায়িক অঙ্গনে পরিচিত। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি তিনি। বিএনপির মনোনয়ন পেতে গত এক বছর ধরে মিরসরাইয়ে জনসংযোগ করেছেন তিনি।

পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি ছেলে নিয়াজ মোরশেদ ঠিকাদারি করেন। চট্টগ্রাম বন্দরে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক মহলে এলিট নামে পরিচিত তিনি। আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তিনি পরিচিত। তিনিও চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে গত দেড় বছর ধরে জনসংযোগ করেছেন।

তবে বাবা-ছেলে দুজন ভিন্ন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এ নিয়ে পরিবারে কোনো বিরোধ নেই। ছেলের কারণে দলীয় মনোনয়ন পেতে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে বাবা মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একসময় জাতীয় পার্টি করতেন। এরপর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ছেলে আওয়ামী লীগ করে। তার রাজনীতি সে করছে। তার ব্যবসাও ভিন্ন। এটি তাঁর জন্য কোনো সমস্যা বলে মনে করেন না তিনি।

ব্যবসা থেকে রাজনীতির মাঠে কেন, এই প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছি। এবার সরাসরি জনসেবা করতে চাই। আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইব।’ নিজেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের আস্থাভাজন দাবি করে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী।’

বাবার রাজনীতির নিজের জন্য বাধা বলে মনে করেন না নিয়াজ মোরশেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা (মনিরুল) বিএনপি করছেন। একসময় আওয়ামী লীগও করতেন। বাবার চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি তাঁর রাজনীতি করছেন। আমি আমারটা করছি।’

হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গ যুক্ত হওয়ার বিষয়ে নিয়াজ মোরশেদ বলেন, ব্যবসার পাশাপাশি নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। কিন্তু রাজনীতি করলে জনসেবা আরও ভালোভাবে করা যায়। তাই মিরসরাই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিনি।

চট্টগ্রাম-১ আসনের বর্তমান সাংসদ হলেন মোশাররফ হোসেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্য। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

মিরসরাইয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতার বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় সংগঠন। যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। আগামী নির্বাচনে মোশাররফ হোসেন মিরসরাই থেকে আবার দলের মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁরা এখন পর্যন্ত জানেন।

মিরসরাইয়ে বিএনপির রাজনীতি কয়েকটি ধারায় বিভক্ত। দলীয় বিভেদ দূর করতে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া নিজেই এই আসনে প্রার্থী হন। পরে উপনির্বাচনে জয়ী হন এম এ জিন্নাহ। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। পরে তিনি বিএনপি ছেড়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী এম ডি এম কামালউদ্দিন চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পান। নির্বাচনে তিনি হেরে যান।

আগামী নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকে চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বলে জানান মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমীন। তিনি বলেন, কে মনোনয়ন পাবেন তা ঠিক করবে দলীয় হাই কমান্ড।