ঝুঁকিতে সেতু ও রাস্তা

যমুনেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তারাগঞ্জের ১৩ মাইল এলাকায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অধিগ্রহণকৃত জায়গা ভরা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
যমুনেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তারাগঞ্জের ১৩ মাইল এলাকায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অধিগ্রহণকৃত জায়গা ভরা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী বালাপাড়া এলাকায় যমুনেশ্বরী নদীতে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এ বালু দিয়ে পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) অধিগ্রহণ করা জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এ কারণে গ্রাম, আবাদি জমি, সড়ক ও সেতু ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর দিকে চার কিলোমিটার দূরে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে বালাপাড়া গ্রাম। এর আরও উত্তরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা। দুই উপজেলাতেই গ্রামটির নাম বালাপাড়া। বালু উত্তোলনের স্থানটি কিশোরগঞ্জে পড়েছে। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনেশ্বরী নদী। নদী ঘেঁষে উত্তর দিকে ইকরচালী-বড়গোলা রাস্তা। গ্রামটির পাশে নদীর ওপর ১৯৭০ সালে নির্মিত ১২০ মিটার বরাতি সেতু। এর ওপর দিয়ে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুরের মানুষ ঢাকাসহ নানা স্থানে যাতায়াত করে। ওই জায়গা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলায় গ্রাম, রাস্তা ও সেতু হুমকিতে পড়েছে।

 তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে বালু তোলায় তাঁর ইউনিয়নের আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে তারাগঞ্জের ১৩ মাইল নামক স্থানে আরডিএ ভবন নির্মাণে জন্য ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। ইকরচালী-বড়গোলা রাস্তার পাশে এবং যমুনেশ্বরী নদীর বরাতি সেতুর প্রায় ৫০০ গজ দূরে বালাপাড়া গ্রামের পাশে খননযন্ত্র বসিয়ে নদী থেকে এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করে ওই জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। মিঠাপুকুরের হারুন-অর-রশিদসহ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী এ কাজ করছেন।

কৃষক সাইবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর হামার আবাদি জমি এমনিতে নদী খাওছে। তার ওপর এবার বালু তোলায় আরও বেশি করি জমি নদীত ভাঙি যাওছে। হামরা অনুনয়-বিনয় করলেও কাও কথা শোনেছে না। বালু তোলা বন্ধ না হইলে হামার ঘরবাড়িও নদীত যাইবে।’

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, এর আনুমানিক ২০ গজ উত্তর-দক্ষিণে ইকরচালী-বড়গোলা রাস্তা। পূর্বে দিকে প্রায় ৭০ গজ দূরে বালাপাড়া গ্রাম। এর আনুমানিক ৫০০ গজ দক্ষিণে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ৪ নম্বর ধারার খ-উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, সড়ক, মহাসড়ক, বাঁধ, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

বালাপাড়া গ্রামের খয়বার হোসেন বলেন, প্রশাসনের লোকজন এ পথ দিয়ে যাতায়াত করার সময় বালু তোলা দেখেন। তারপরও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

বড়গোলা গ্রামের মনমোহন চন্দ্র বলেন, ‘মুই গরিব মানুষ। যে ৫০ শতক জমি আছে, তাকে চাষ করি সংসার চলোছে। কিন্তুক মোর জমির গোড়োত নদী থাকি এক মাস ধরি দিনে-রাইতে বালু তোলোছে। ওই জন্যে মোর জমি নদীত ভাঙি যাওছে। বাধা করলেও শোনেছে না। মোক মারধরের হুমকি দেখাওছে।’

জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশিদ গতকাল বলেন, ‘বালাপাড়া গ্রামের পাশ থেকে বালু তোলার অনুমতি না থাকলেও নদীর অন্য স্থান থেকে বালু তোলার অনুমতি আমার কাছে আছে। আমি ঢাকায় ব্যস্ত। বিষয়টি নিয়ে পড়ে কথা বলব।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, বিষয়টি এর আগে কেউ জানায়নি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।