বিদ্যালয় মাঠে নির্মাণসামগ্রী

বিদ্যালয় মাঠে স্তূপ করে রাখা বালু–পাথরের মধ্যেই খেলতে নেমে পড়েছে শিশুরা। ছবিটি কুমারখালীর ভড়ুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরের l প্রথম আলো
বিদ্যালয় মাঠে স্তূপ করে রাখা বালু–পাথরের মধ্যেই খেলতে নেমে পড়েছে শিশুরা। ছবিটি কুমারখালীর ভড়ুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরের l প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ভড়ুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মাসের পর মাস পাথরসহ নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। এতে খেলাধুলা করতে পারছে না শিশু শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামও অসহায়ের কথা অকপটে স্বীকার করেন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নির্মাণসামগ্রী রাখায় পাথরের আঘাতে এক শিশুর হাতও ভেঙে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একতলা ভবনের তিনটি কক্ষে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছিল। সেখানে তিনজন নারী শিক্ষক পাঠ দিচ্ছিলেন। বিদ্যালয় ভবনের সামনের খোলা মাঠজুড়ে পাথরের স্তূপ। পাশেই পরিত্যক্ত টিনের আরেকটি ভবন।

শিক্ষকেরা জানান, ১৭৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২৬১ জন ছাত্রছাত্রী আছে। তিনটি কক্ষে ক্লাস নেওয়া হয়। কক্ষসংকটের কারণে শিশু শ্রণির ক্লাস পরিত্যক্ত ভবনেই নেওয়া হয়। গত বছর পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৯ জন অংশ নিয়ে ৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার আগের বছর ৩২ জনের মধ্যে ১০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

দুজন নারী শিক্ষক প্রথম আলোকে জানান, সবচেয়ে বড় সমস্যা এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১০ মাস ধরে সড়কের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। পাথর, বালু, বিটুমিনসহ যাবতীয় জিনিসপত্র রাখা হয়। শ্রেণিকক্ষের পাশেই বিটুমিন জ্বালানো হতো। এতে শিশুদের শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। তাঁদেরসহ শিশুদের চোখ জ্বালা করত। আগুনের শিখায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি মেহগনিগাছও মরে গেছে। চার মাস আগে পাথরের স্তূপ থেকে পড়ে গিয়ে রুকাইয়া খাতুন নামের শিশু শ্রেণির এক ছাত্রীর ডান হাত ভেঙে যায়। তার বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশেই। কথা হলে শিশুটির মা মনোয়ার খাতুন জানান, সদর হাসপাতালে গিয়ে রুকাইয়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে নিয়ে আসা হয়। পাথরের ওপর থেকে পড়ে গিয়ে হাতের হাড়ে ফাটল ধরেছিল।

শিক্ষক রাশিদা খাতুন ও ফারহানা খাতুন বলেন, ১০ মাস ধরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। ক্লাস নিতেও সমস্যা হয়। ছোট ছোট শিক্ষার্থী পাথরের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন ও এলাকাবাসীও কোনো গুরুত্ব দেন না।

বিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে এলাকার পাঁচ-সাতজন বাসিন্দা বসে ছিলেন। তাঁদের মধ্য সালামত আলী ও দোয়াজ হোসেন জানালেন, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জাহিদ হোসেন এসব সামগ্রী রেখেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এলাকায় সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। এলাকার উন্নয়নের জন্য স্কুলে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। যদিও এটা রাখা ঠিক না। আঘাতপ্রাপ্ত শিশুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এক মাসের মধ্যে পাথরগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে।’

কুমারখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের কাজের জন্য হলেও নির্মাণসামগ্রী স্কুল প্রাঙ্গণে রাখার বিধান নেই। সেখানে সড়কের কাজের তো প্রশ্নই আসে না। ঠিকাদারের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় শিক্ষকেরা কিছু করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’