সাত বছর ধরে নিষ্ক্রিয়

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম সাত বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার ক্রীড়া অঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই কারণে শিশু ও কিশোরেরা খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে না। ক্রীড়া সংস্থার সদস্যদের গাফিলতির কারণে এবং বড় খেলার মাঠ না থাকায় উপজেলায় বড় ধরনের কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা যাচ্ছে না।

ক্রীড়া সংগঠক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মিল্লাত বলেন, কুলিয়ারচর অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে। বর্তমানে সবচেয়ে পিছিয়ে খেলাধুলায়। এ ক্ষেত্রে ক্রীড়া সংস্থার ব্যর্থতা বড়। তরুণ সমাজকে মুঠোফোন ও মাদকাসক্তি থেকে সরিয়ে আনতে খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

 ক্রিকেট খেলোয়াড় নয়ন ঘোষ বলেন, ‘টুর্নামেন্ট আয়োজন তো দূরের কথা, মাঠের অভাবে আমরা অনুশীলনও করতে পারি না। স্কুলের মাঠে খেলতে গেলে শিক্ষকদের কাছ থেকে বাধা আসে।’

ফুটবল খেলোয়াড় সোহেল আহমেদ ও চন্দন শীল বলেন, কুলিয়ারচরে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন না করায় এ খেলায় নতুনেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকেই খেলা ছেড়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, পুরো উপজেলায় খেলাধুলার পরিকল্পনা, আয়োজন, প্রসার ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে এর মানোন্নয়ন করা ক্রীড়া সংস্থার কাজ। একই সঙ্গে এই সংস্থা ক্লাব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করবে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খেলা পরিচালনার জন্য দক্ষ সংগঠক, প্রশিক্ষক, আম্পায়ার, রেফারি, বিচারক ইত্যাদি সৃষ্টি করাও ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া ওই গঠনতন্ত্রে জেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় উপজেলা থেকে দল পাঠানো এবং পাঠানোর আগে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

স্থানীয় কয়েকজন খেলোয়াড় জানান, কমপক্ষে সাত বছর ধরে কুলিয়ারচর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা কোনো দায়িত্বই পালন করছে না। এই সময়ের মধ্যে ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে এ উপজেলায় কোনো আয়োজন হয়নি। এমনকি কমিটির সভাও হয়নি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ক্রীড়া সংস্থার কমিটি দুই বছর মেয়াদের। ২৫ সদস্যের কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ১ নম্বর সহসভাপতি উপজেলা পরিষদ কর্তৃক মনোনীত একজন ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে থাকেন। ২ নম্বর সহসভাপতি পদাধিকার বলে থানার ওসির জন্য বরাদ্দ। ১৫ জন নির্বাহী সদস্যের মধ্যে ৫টি পদাধিকার বলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তা দিয়ে পূরণ করা হয়। সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭টি পদের সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে আসেন।

কুলিয়ারচর ক্রীড়া সংস্থার সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০০৭ সালের শুরুর দিকে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক শেখ জহির উদ্দিন ছিলেন ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক। কমিটি গঠনের প্রথম তিন বছর সংস্থার কার্যক্রম সচল ছিল। নিষ্ক্রিয়তার কারণে কিছুদিন আগে ক্রীড়া সংস্থার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

২২ নভেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা শহরে ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয় নেই। সরকারি মাঠ নেই। খেলার জন্য পৌর শহরে থানার মাঠ, কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ, কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজ মাঠ রয়েছে। তিনটি মাঠ লাগোয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় মাঠগুলো খেলার জন্য উন্মুক্ত নয়।

সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শেখ জহির উদ্দিন বলেন, ক্রীড়া সংস্থার নিষ্ক্রিয় হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব ও অর্থ-সংকট বড়। বড় আয়োজন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, গঠনতন্ত্রে ব্যক্তিগত অনুদান গ্রহণ, প্রদর্শনী, বিনোদন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতামূলক খেলার আয়োজন করে তহবিল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব করতে গিয়ে অনেক সময় ইমেজ-সংকটে পড়তে হয়েছে। ফলে একপর্যায়ে গিয়ে পিছুটান কাজ করেছে।

 ক্রীড়া সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করে ইউএনও বলেন, কিছু দিনের মধ্যে ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি করা হবে। কমিটি গঠন করার পর ক্রীড়া সংস্থার গতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।