'নেতা-গোতা সবাইরে টেহা দিয়া ব্যবসা খুলছি'

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক এভাবে দখল হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ তাকিয়ে আছে সিটি করপোরেশনের দিকে
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক এভাবে দখল হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ তাকিয়ে আছে সিটি করপোরেশনের দিকে

ফটকের মাঝ বরাবর উল্টে আছে একটি বিকল ভ্যানগাড়ি, ময়লার খালি ঠেলা। ফটকের দুই পাশে বসানো হয়েছে দোকান। ফটকের পাশের ফুটপাতও খাট-চৌকি ও লেপ-তোশকের দোকানের দখলে।

এটি দেশের দন্ত চিকিৎসার একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকের চিত্র।

এই ফটকের মতোই অবস্থা হাসপাতালের চারপাশের। চারপাশে পচা আবর্জনার গন্ধে হাসপাতাল ভবনের জানালা খোলা যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের।

ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের চারটি ফটক। প্রধান ফটকটি মিরপুর ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া। এটি মূলত কলেজ ভবনের যাতায়াতের উদ্দেশে তৈরি করা। বাকি তিনটি ফটক ভাসানটেক রোডসংলগ্ন। এই তিন ফটকের প্রথমটি সব সময় বন্ধ থাকে। দ্বিতীয়টি ব্যবহার করা হয়। এই ফটকের দুই পাশের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। তৃতীয় ফটকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের। এই ফটকের বর্ণনা তো শুরুতেই ছিল।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল লাগোয়া ফুটপাতে অন্যান্য দোকানের সঙ্গে আছে বাঁশের দোকান
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল লাগোয়া ফুটপাতে অন্যান্য দোকানের সঙ্গে আছে বাঁশের দোকান

গত রোববার সকালে ফটকের সব বাধা ডিঙিয়ে জরুরি বিভাগে যাচ্ছিলেন মৃদুল নামের এক রোগী। বিরক্ত মৃদুলের বিস্ময়—একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের অবস্থা কীভাবে এমন হয়!

উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ফটকটির এমন অবস্থা দীর্ঘদিনের। এই ফটক দিয়ে রোগী ও তাঁর স্বজনদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। দখল মুক্তির জন্য তারা তাকিয়ে আছে সিটি করপোরেশনের দিকে।

আর ফটকের সামনে ভ্যান রাখার কারণ হিসেবে এর মালিক (পাশের পুরোনো কাগজ ব্যবসায়ী) বলেছেন, ‘এই গেট দিয়া রোগী ঢোহে না। আর এই হানে মাগনা বসি নাই, নেতা-গোতা সবাইরে টেহা দিয়া ব্যবসা খুলছি।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের পাশে ভাঙারির দোকান। ছবিগুলো তুলেছেন গোলাম রব্বানী
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের পাশে ভাঙারির দোকান। ছবিগুলো তুলেছেন গোলাম রব্বানী

এই নেতাদের কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক জাহিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুটপাত ও গেটের বাইরের জায়গা হাসপাতালের নয়। ওগুলো সিটি করপোরেশনের আওতায়। তারপরও আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে উচ্ছেদের পরক্ষণেই তা আবার দখল হয়েছে। আমরা অসহায়।’

এই ফটক ছাড়াও হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে দেখা গেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। কলেজ লাগোয়া ফুটপাতজুড়ে পুরোনো লোহা-লক্কড়, পুরোনো কাগজের দোকান আর বাঁশের বাজার।

তবে হাসপাতালের ভেতরে বেশ পরিচ্ছন্ন। ২০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে নারী, পুরুষ, শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। কেবিন, পেয়িং বেডসহ অন্য সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু বাইরের আবর্জনার দুর্গন্ধে হাসপাতালের জানালা খোলা যায় না বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকারা।