বগুড়া ছাত্রলীগে হ-য-ব-র-ল

কোনোটি চলছে কমিটি ছাড়াই। কোনোটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেই কবে। কোনোটিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বগুড়ায় ছাত্রলীগ এমন সাংগঠনিক হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে চলছে।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের অধীনে ২০টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি উপজেলা ও ৭টি কলেজ কমিটি। অপরটি বগুড়া শহর কমিটি। ছাত্রলীগের এই ২০টি শাখাই কোনো না কোনো সমস্যায় আছে। জেলা কমিটির অধীন ৬টি শাখা চলছে কমিটি ছাড়াই। আর ৯টি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। বাকি ৫টির মধ্যে সম্প্রতি সম্মেলন হলেও হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি অথবা নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতায় কমিটিই দেওয়া হয়নি। ১টিতে আহ্বায়ক কমিটি বসেছে। জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এমনকি জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৫ সালের ৭ মে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন এবং ১২ মে কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের জেলা-উপজেলা ও কলেজ কমিটির মেয়াদ এক বছর।

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক অসীম কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, গঠনতন্ত্র মেনে এখন কোথাও সম্মেলন করা সম্ভব হয় না। চার-পাঁচ বছরের আগে কোথাও কমিটি হয় না। সময় গেছে, ছাত্রলীগ আধুনিক হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করা হয়নি।

কলেজ কমিটিগুলোর অবস্থা

জেলার মধ্যে একমাত্র শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টি পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে বগুড়া শহরের সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি। উপরন্তু ১২ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষের কার্যালয়ে হামলার জেরে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ কুমারসহ তিন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর থেকে সেখানে স্থবির ছাত্রলীগের কার্যক্রম। আর ভর্তি-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় ২০১৬ সালের ৩০ জুন শহরের সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেখানে কমিটি ছাড়াই চলছে ছাত্রলীগ।

উপজেলা পর্যায়ে সান্তাহার সরকারি কলেজ, গাবতলী সরকারি কলেজ ও সোনাতলা নাজির আখতার সরকারি কলেজ—তিনটি কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন ছাড়াই এই তিন কলেজে কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।

বর্তমানে বগুড়া শহরের সরকারি আজিজুল হক কলেজ কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্মেলন ছাড়াই ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর এই শাখার কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। কে এম মোজাম্মেল হোসেন সভাপতি এবং আবদুর রউফ সাধারণ সম্পাদক হন। আজ পর্যন্ত তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি।

কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

১২ উপজেলা কমিটি

বগুড়ায় ছাত্রলীগের ১২টি উপজেলা কমিটির মধ্যে ২০১২ ও ২০১৩ সালের পর থেকে সম্মেলন হয়নি ১০টিতে। এর মধ্যে ৮টি উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দিতে জেলাকে গত ৬ জুলাই নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৩ জুলাই শাজাহানপুর, ২৪ জুলাই শেরপুর, ২৫ জুলাই ধুনট, ২৬ জুলাই আদমদীঘি, ২৩ সেপ্টেম্বর সারিয়াকান্দি, ২৪ সেপ্টেম্বর কাহালু, ২৫ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং ২৬ সেপ্টেম্বর নন্দীগ্রামে সম্মেলনের কথা ছিল। নির্ধারিত দিনে শেরপুর, ধুনট ও শাজাহানপুরে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছে। তবে এই তিন উপজেলায়ও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আর সম্মেলনের বদলে সারিয়াকান্দি উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

পুনরায় ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী ৬ নভেম্বর আদমদীঘি, ৭ নভেম্বর কাহালু, ৮ নভেম্বর গাবতলী এবং ৯ নভেম্বর নন্দীগ্রামে ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। আদমদীঘি ও কাহালুতে নির্ধারিত দিনে সম্মেলন হয়েছে। তবে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে জটিলতায় আজও কমিটির ঘোষণা আসেনি। অন্যদিকে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় গাবতলী ও নন্দীগ্রাম উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করেছে ছাত্রলীগ।

বাকি চারটির মধ্যে শিবগঞ্জ ও দুপচাঁচিয়ায় ২০১২ ও ২০১৩ সালের পর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। এর বাইরে সোনাতলায় সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল এবং বগুড়া সদর উপজেলায় ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, এই চার কমিটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য নেতা-কর্মীদের ছাত্রত্ব আছে কি না, বয়স ২৯ এবং অবিবাহিত কি না—এসব ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে অনেক সময় লেগে যায়। এরপরও তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সব শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় বলেন, বর্তমান জেলা কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫৯টি ইউনিয়ন ও ৮টি উপজেলা কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করেছে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক সরকারি আজিজুল হক কলেজ এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ কমিটিও তারা করে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বগুড়া ছাত্রলীগ এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও পরিচ্ছন্ন বলে দাবি এই নেতার।

এদিকে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া শহর ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। কমিটির মেয়াদ পৌনে তিন বছর হলেও সম্মেলন হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ মাস দু-এক আগে এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। তবে এ-সংক্রান্ত চিঠিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু লেখা হয় ‘অনিবার্য কারণে’ কমিটি বিলুপ্ত করা হলো।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনেক পুরোনো। এটাকে যুগোপযোগী করা দরকার। কারণ, এক বছরের মধ্যে কমিটিকে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা যায় না। প্রতিটি কমিটির মেয়াদ দুই বছর করা দরকার। তবে একটা কমিটি চার-পাঁচ বা তারও বেশি বছর ধরে চলছে, এটা হতে পারে না।