এক মেডিকেল কলেজে দুই অধ্যক্ষ!

রাজধানীর ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে বর্তমানে দুজন অধ্যক্ষ। দুজনই ভারপ্রাপ্ত। দেশের প্রথম এই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দ্বন্দ্বের জেরে নতুন বছরে ৮৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন আটকে গেছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে নতুন কিছু শিক্ষার্থীর এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির বিষয়টি।

একজন অধ্যক্ষের পক্ষে আছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি চিকিৎসক নেতা অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। অন্য অধ্যক্ষের পেছনে আছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক। মাহমুদ হাসান ও আবদুর রাজ্জাক দুজনই সঠিক অবস্থানে থেকে ঠিক কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাগজপত্র বলছে, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কের এই কলেজটিতে বছরে ১২০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।

কলেজের কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের মালিকানার পার্থক্য আছে। কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এর মালিক নয়। এটি ‘বাংলাদেশ মেডিকেল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএমএসআরআই)’ নামের ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। এই ট্রাস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত। বর্তমানে এই ট্রাস্টের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক।

মেডিকেল কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী কলেজের একটি পরিচালনা পরিষদ আছে। অধ্যাপক মাহমুদ হাসান সেই পরিচালনা পরিষদের সভাপতি।

কলেজ পরিচালনা নিয়ে পরিচালনা পরিষদ ও ট্রাস্টি বোর্ডের টানাপোড়েন অনেক দিনের। এই বিরোধ জনসমক্ষে চলে আসে গত ১৮ ডিসেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ তাইমুর নেওয়াজের পদত্যাগের পর। সে সময় উপাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক এ এইচ এম শামসুল আলম। মাহমুদ হাসান বলেন, ‘পরিচালনা পরিষদ উপাধ্যক্ষকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এই পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা শুধু পরিচালনা পরিষদের।’

অন্যদিকে ট্রাস্টি বোর্ড ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক পরিতোষ কুমার ঘোষকে। ২৪ ডিসেম্বর শামসুল আলমের কাছ থেকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের চাবি একটি কাগজে স্বাক্ষর করে বুঝে নেন আবদুর রাজ্জাক। গত সপ্তাহে আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, শামসুল আলমের উপাধ্যক্ষের পদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল বুধবার কলেজের পরিচালনা পরিষদকে চিঠি দিয়ে বলেছে, নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শামসুল আলম দায়িত্ব পালন করবেন। পরিতোষ কুমার ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধানের পরিপন্থী। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মেডিকেলে শিক্ষা, ভর্তি ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে কলেজের অধিভুক্তি স্থগিত করার পদক্ষেপ নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিঠিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে মাহমুদ হাসান-শামসুল আলম পক্ষ। আর ক্ষোভ প্রকাশ করে আবদুর রাজ্জাক গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সব তথ্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিএমএসআরআইও বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেবে।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মাসের ২ বা ৩ তারিখের মধ্যে ৮৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন পেয়ে যান। বেতনের চেকে বিএমএসআরআইয়ের সভাপতি, পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষের স্বাক্ষর দরকার হয়। একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সহজে বিবাদ মিটবে না, বেতনও হবে না।