এ যেন সিনেমার কাহিনি!

চাইলে সিনেমার কাহিনির সঙ্গে ঘটনাটির মিল খুঁজতে পারে কেউ। নোয়াখালী শহরের কলেজপাড়ার পাটোয়ারী বাড়ির মো. ইসমাইল (৫৫) গত ২৩ ডিসেম্বর হৃদ্‌রোগে মারা যান সৌদি আরবের রিয়াদে। সেখান থেকে তাঁর লাশ আসে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গত শুক্রবার বিকেলে কফিনে থাকা লাশ স্বজনেরা বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যান গ্রামের বাড়িতে। প্রশ্ন জাগতে পারে এর সঙ্গে সিনেমার কাহিনির কী মিল?

গতকাল শনিবার সকালে লাশ দাফনের আগে স্বজনেরা কফিন খোলেন। কিন্তু একি! ভেতরে তো নারীর লাশ! স্বজন ও প্রতিবেশীরা হতভম্ব। শোকাহত পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে সঠিক লাশ নিয়ে যেতে বলে।

প্রায় একই রকমের একটি ঘটনা নিয়ে পরিচালক তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র অজ্ঞাতনামা। প্রবাসী শ্রমিকের দুর্দশাকে পটভূমি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্র দর্শকদের অশ্রুসিক্ত করেছে। চলচ্চিত্রে দেখা যায়, দরিদ্র এক কৃষকের ছেলে সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ঢাকার বিমানবন্দর থেকে লাশ আনার পর দাফনের আগে কফিন খুলে দেখা গেল ভিন্নধর্মের ভিনদেশি এক ব্যক্তির লাশ পাঠানো হয়েছে ভুলবশত।

নোয়াখালীর ইসমাইল ২০ বছর সৌদি আরবে ঠিকাদারি করেন।

লাশবদলের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসমাইলের ভাই ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার বিকেল চারটায় তাঁর ভাইয়ের লাশ বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে তাঁর ভাতিজা মো. ইউছুফ কফিন বুঝে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজে স্বাক্ষর করার পর দেখেন তাতে লাভলী বেগম নামের এক নারীর নাম লেখা রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু তাঁর আপত্তি শোনা হয়নি। তাঁকে বলা হয়, কফিনের ভেতরের লাশ ইসমাইলের। এরপর তিনি লাশ নিয়ে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দেন। শুক্রবার রাত দুইটায় লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছান।

ইব্রাহিম খলিল বলেন, গতকাল সকাল ১০টায় লাশ দাফনের সময় নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং আত্মীয়–স্বজনদেরও সময়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে লাশ বুঝে নেওয়ার সময় সরকারের বড় কর্মকর্তারা দাফনের এক ঘণ্টা আগে কফিন খুলতে বলে দেন। সে অনুযায়ী সকাল নয়টায় তাঁরা কফিন খুলে দেখেন ভেতরে নারীর লাশ। সঙ্গে থাকা কাগজে লেখা লাভলী বেগম, বাড়ি গোপালগঞ্জ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে যোগাযোগ করলে সঠিক লাশটি নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে বিকেলে বিমানবন্দর থেকে ভাতিজা ইউছুফ তাঁর ভাইয়ের লাশ বুঝে নিয়ে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দেন। রোববার (আজ) সকাল ১০টায় ইসমাইলকে দাফন করার কথা রয়েছে।

লাশবদলের বিষয়ে নোয়াখালী জেলা শ্রম ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, যে দেশ থেকে লাশ পাঠানো হয়েছে ওই দেশেই কফিনের গায়ে স্টিকার লাগিয়েছে। কফিনে ইসমাইল এবং ওই নারীর নাম একসঙ্গে লেখা ছিল। এ কারণেই হয়তো ভুল হয়েছে। তবে এটা অনভিপ্রেত। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিহত ব্যক্তির পরিবারের আপত্তি শুনলে ভালো করত।

এদিকে বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় কাগজপত্র ভালোভাবে না দেখে এভাবে একজনের লাশ অন্যজনকে বুঝিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জানাজা পড়তে আসা মুসল্লিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন নিহত ইসমাইলের প্রতিবেশী নুরুল আমিন। তিনি বলেন, সবাই যখন শোকে মুহ্যমান তখন, দাফনের এক ঘণ্টা আগে কফিন খুলে দেখা গেল নারীর লাশ। এটা নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে চরম নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু নয়।