দুর্ভোগের অন্যতম কারণ সেতু

সাভারের নামাবাজার এলাকায় সেতুর ঢালে যানজটে আটকে আছে যানবাহন। গতকালের ছবি l প্রথম আলো
সাভারের নামাবাজার এলাকায় সেতুর ঢালে যানজটে আটকে আছে যানবাহন। গতকালের ছবি l প্রথম আলো

ঢাকার ধামরাইয়ের মানুষের যাতায়াত সহজ করতে বংশী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতীক্ষার সেই সেতু মানুষকে আরও ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে। সেতু পার হতে গিয়ে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকদের।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলার দক্ষিণের কুল্লা, রোয়াইল, নান্নার, সোয়াপুর ইউনিয়নসহ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের তালেবপুর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ সাভারের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসা ও চিকিৎসাসহ নানা গৃহস্থালি কাজে তাদের সাভারে যেতে হয়। সাভার ও ধামরাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বংশী নদীর কারণে এসব এলাকার মানুষের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য বছর দেড়েক আগে সাভারের নামাবাজার ও ধামরাইয়ের ফোর্ডনগর এলাকায় বংশী নদীর ওপর ২৭৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়। গত বছর জনসাধারণের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।

কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কালিপদ সরকার বলেন, সেতুর পূর্ব পাশে সাভার নামাবাজার, যা রাজধানীর পরেই বড় পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত। ওই বাজারের অধিকাংশ ট্রাকের মালামাল ওঠা-নামা করানো হয় সেতুর ঢালে। ফলে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যানজটের সৃষ্টি হয়, যা চলতে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে।

রোয়াইল ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কালাম সামসুদ্দিন বলেন, ‘দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সেতু নির্মাণ করে আমাদের আরও দুর্ভোগের মধ্যে ফেলা হয়েছে। আগে নদী পারাপার হতে উভয় ঘাটে নৌকার জন্য কিছু সময় বসে থাকতে হতো। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো না।’ তিনি বলেন, কুল্লা, রোয়াইল, নান্নার ও সোয়াপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক সাভার ও রাজধানীতে বসবাস করেন। তাঁদের সবাইকে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে তাঁদের অনেকেই সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেন না।

স্থানীয় সুংঘোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, সেতুর ঢালে সৃষ্ট যানজটের কারণে তাঁকে প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। এরপরও মাঝেমধ্যে তিনি সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারেন না।

গতকাল মঙ্গলবার বংশী নদীর পূর্ব পাশে সেতুর ঢাল থেকে সাভার থানা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে শতাধিক পণ্যবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেতুর ঢালে একসঙ্গে অন্তত ১০টি ট্রাক থেকে পণ্য নামানো হচ্ছিল। পণ্য ওঠা-নামা করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কারণে খুব সামান্য জায়গা ছিল অন্য যানবাহনের চলাচলের জন্য। এরপর আবার যাত্রী পরিবহনের জন্য শতাধিক মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল।

একটি ট্রাক থেকে ডালের বস্তা নামিয়ে নছিমনে তুলছিলেন শ্রমিকেরা। এ কারণে সড়কের ওই অংশ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বস্তাসহ নছিমন চলে যাওয়ার পরপর এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ট্রাকচালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘মালামাল লোড-আনলোডের (ওঠা-নামা) জায়গা না থাকায় রাস্তার ওপরই ট্রাক রাখতে হয়। এতে মানুষের কষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের করার কিছুই নেই।’

ডালের মিলের মালিক মুস্তাকিন বলেন, যানজটের মূল কারণ সরু সড়ক ও যানবাহনের শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করতে হবে, অন্যথায় বর্তমান সড়কটি প্রশস্ত করতে হবে।

ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র ঘোষ বলেন, সেতুর ঢালে যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এরপরও সেখানে কোনো ট্রাফিক বা থানা-পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না।

সাভার বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন দেওয়ান বলেন, ‘প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাকের পণ্য লোড-আনলোড হয় এই বাজারে। অথচ এসব ট্রাক লোড-আনলোড করার জন্য কোনো টার্মিনাল বা জায়গা নেই। তাই ব্যবসায়ী এবং ট্রাক শ্রমিকেরা বাধ্য হয়ে সেতুর ঢাল ব্যবহার করে থাকেন।’ তিনি বলেন, সাভার বাজার থেকে কয়েক শ ফুট দূরে সাভার থানার সামনে নদীর ধারে বিশাল জায়গা পড়ে আছে, যা সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। সেখানে টার্মিনাল করে দিলে যানজটও দূর হবে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।