তানিমের 'ভালো থাকার শেষ দিন'

তানিম খান
তানিম খান

একটি সেলফি। নিচে ক্যাপশন ‘ভালো থাকার শেষ দিন’। ১৩ ডিসেম্বর নিজের ছবি তানিম খান ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন। জীবদ্দশায় এ নিয়ে কোনো মাতামাতি ছিল না। গত রোববার অতর্কিত হামলায় নিহত হওয়ার পর ‘ভালো থাকার শেষ দিন’ আপ্লুত করেছে ফেসবুক বন্ধুদের। আবদুল্লাহ আল ইমন নামের একজন লিখেছেন, ‘সত্যি, এটাই ছিলো তোমার ভালো থাকার শেষ দিন!!...তোমার মায়েরও তো আজ থেকে ভালো থাকার শেষ দিন, তাই না? ছেলেহারা মা ভালো থাকবে কীভাবে?’

গতকাল মঙ্গলবার তানিম খানের ফেসবুক আইডি রিমেম্বারিং করা হয়েছে। তাতে যেন শোক আর ক্রোধ একাকার। ফেসবুক বন্ধুসহ স্বজন-পরিচিতজনদের নানা রকম মন্তব্য, তির্যক কথা শোভা পাচ্ছে। সিলেট নগরের টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের একাধিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সাবধান, সামনে টিলাগড়!’ এ রকম সাবধানবাণীও আছে।

তানিমের আগে টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের বিরোধে খুন হন আরও দুই ছাত্রলীগ কর্মী। সেই দুই ঘটনাও ফেসবুকে আলোড়ন তুলেছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর টিলাগড়ে ছোট ভাইকে অপহরণ করে শিবগঞ্জ এলাকায় ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুমকে। ছাত্রলীগের ‘সুরমা গ্রুপ’–এর কর্মী মাসুম ফেসবুকে ছাত্রলীগের আদর্শের একজন প্রচারক ছিলেন। ১৬ অক্টোবর টিলাগড়ে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ। বেসরকারি কলেজের আইনের ছাত্র মিয়াদ খুনের পর বিলুপ্ত হয় জেলা কমিটি। হত্যা মামলায় আসামি হন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা এম রায়হান চৌধুরী।

কর্মী খুনে নেতা জড়িত, কমিটি বিলুপ্ত—এসব ঘটনায় সাবেক, বর্তমান নেতা ছাড়াও কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল। এ সময় সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে একটানা প্রায় এক দশক নেতৃত্ব দেওয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরীর ‘খুনির চিঠি’ শিরোনামে স্ট্যাটাস ফেসবুকে বেশ আলোচিত হয়। ২১ অক্টোবর প্রথম আলোয় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে সেই আলোচনা আরও বেগ পেয়েছিল। দেড় মাসের মাথায় আরও এক হত্যা। গত রোববারতানিম খুনের পর ‘খুনির চিঠি’ নিয়ে ফেসবুকে আবারও আলোচনা দেখা গেছে।

সিলেট সরকারি কলেজের স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তানিম খান। ওসমানীনগরের বুরুঙ্গা ইউনিয়নের নিজ বুরুঙ্গা গ্রামের ইসরাইল খানের ছেলে। টিলাগড়ের পার্শ্ববর্তী মেজরটিলা এলাকায় একটি মেসবাড়িতে থাকতেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সপ্তম। তাঁরা পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সোমবার তানিমের লাশ দাফনকালে গ্রামের বন্ধু নাজমুল হক বলেন, ‘সিলেট থাকায় তানিমের সঙ্গে দেখা–সাক্ষাৎ আগের মতো না হলেও ফেসবুকে থাকায় যোগাযোগটা ভালোই ছিল।’

টিলাগড়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রনজিত সরকারের অনুসারী ছিলেন তানিম। অনুসারী নিহত হওয়ায় রোববার রাতে হাসপাতালে দেখা গেছে রনজিতকে। লাশের পাশে বসে কাঁদছিলেন তিনি। রনজিতের ফেসবুক আইডিতে সোমবার দুপুর থেকে শোভা পাচ্ছে ছোট্ট কথার একটি স্ট্যাটাস ‘আর কত, কোথায় গিয়ে লুকাবো!’ তাতে দেশে ও বিদেশে থাকা তাঁর অনুসারীরা অসংখ্য মন্তব্য ও শেয়ার করেছেন।

শাহরিয়ার সিজিল নামের একজনের মন্তব্য, ‘কিসের লুকিয়ে রাখা, সব সহ্যের বাহিরে!! হউক প্রতিবাদ।’ শামীম আহমদের প্রশ্ন, ‘এই লাশের মিছিলের শেষ কোথায়?’