'পাগলের কথায় বেশি মনোযোগ না দেওয়াই ভালো'

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  । ফাইল ছবি
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি নেত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমি কী মন্তব্যটা করব? তবে সেতু তো বিভিন্ন পার্ট (অংশ) তৈরি করে করে নির্মাণ হয়। এ ক্ষেত্রে তো জোড়া দিয়েই সেতু করা হয়। জোড়া না দিলে তো সেতু হয় না। কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) জোড়াতালি দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে বাংলাদেশে তো একটা প্রচলিত কথা রয়েছে, পাগলে কিনা কয়, ছাগলে কিনা খায়। আমার মনে হয়, এ ধরনের পাগলের কথায় বেশি মনোযোগ না দেওয়াই ভালো।’

আজ বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হচ্ছে—খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তাই এ মন্তব্যকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে মেনে নেওয়া ভালো।’

উল্লেখ্য, সরকারের এ আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না দাবি করে ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এখন পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। আর সেই সেতুতে ওঠার জন্য...একটি যদি জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক (ঝুঁকি) আছে।’

আজ সরকারি দলের তাজুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আবার নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে জনগণই তা প্রতিহত করবে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়েছিল, কিন্তু জনগণ সমর্থন দেয়নি। এত বাধা সত্ত্বেও মানুষ ভোট দিয়েছে।

খালেদা জিয়া পরিবারের বিদেশে সম্পদ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলেদের সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি এবং সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বিদেশে খালেদা জিয়া পরিবারের সম্পদ ও প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশিদের নাম নিয়ে প্রকাশিত ৮৫টি সংবাদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিশিষ্টে সংযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই কম পরিচিত অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ।

সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির তালিকায় খালেদা জিয়া ৩ নম্বর হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। খালেদা জিয়া এসব সংবাদের কোনো প্রতিবাদ জানাননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিপূর্বে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার সে দেশ থেকে ফেরত আনা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে পাচারের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাঁদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে গঠিত টাস্কফোর্স ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার শনাক্ত হওয়া ঘটনাগুলোয় অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও বিএফআইইউ বিদেশে তাদের কাউন্টার পার্টনারদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ও অবৈধভাবে দেশে আনা অর্থ ফেরত দেওয়ার সাফল্যের কয়েকটি উদাহরণও সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিংবা অন্য পদ্ধতিতে অর্থ পাচারবিষয়ক বেশ কিছু মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন ও দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে প্রচুর অর্থ পাচার করেছেন। তারেক ও তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার বিনিময়ে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে পাচার করেছেন। এ ব্যাপারে এফবিআইও তদন্ত করেছে। এ মামলায় হাইকোর্ট কর্তৃক তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা হয়। একইভাবে লন্ডনে ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাংকেও প্রায় ছয় কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে অর্থ পাচারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে। আমরা ইন্টারনেটে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে যা যা পেয়েছি, সেগুলো আমরা সম্পৃক্ত করে দিয়েছি। এটা কতটুকু সত্য, যাদের নাম এসেছে তাঁরা নিজেরাই এর জবাব দিতে পারবেন। এর মধ্য থেকে সবাই যাচাই-বাছাই করে নেবেন, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। কারও বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা অভিযোগ থাকে, তাঁরা নিশ্চয়ই সেটা নিয়ে কনটেস্ট করবেন। তথ্যগুলোর বিষয়ে আমাদের তদন্তের কাজ চলছে।’