ভুঁই আঁকড়া

ভুঁই আঁকড়া ফুল l ছবি: লেখক
ভুঁই আঁকড়া ফুল l ছবি: লেখক

সবুজ ঘাসের গা থেকে শিশিরবিন্দু তখনো মুছে যায়নি। সকালে রোদের আলো পড়তে শুরু করেছে। ঘাসের মাঝে জন্মানো গোলাকার পাতার লতায় ছোট ছোট কলি। পাপড়িরা মেলতে শুরু করেছে। সাদা রঙের খুদে ফুল। সবুজ ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে বিন্যস্ত ফুলগুলো একটা প্রশান্তির আবহ তৈরি করেছে।

বাংলাদেশে বহু প্রজাতির কলমি ফুল রয়েছে। তবে সবচেয়ে খুদে কলমি ফুল হলো ভুঁই আঁকড়া। দেশের সব জেলায় এ উদ্ভিদ দেখা যায়। বিশেষ করে পাহাড়ের ঢালে, মাঠের পাশে, ছোট ঘাসের বাগানে, সড়কের পাশে ইত্যাদি জায়গায় বেশি দেখা যায়। তবে ফুলের আকার ছোট। ভালোভাবে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে খুব কাছে গিয়ে দেখতে হবে।

ভুঁই আঁকড়া গোলাকার পাতার ভূশায়িত বহুবর্ষজীবী বীরুৎ-জাতীয় লতা। ভূমি আঁকড়ে ধরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে বাংলা নাম ভুঁই আঁকড়া। কাণ্ডের গোড়া থেকে অর্থাৎ নিচের পর্ব থেকে শিকড় গজায়। পাতা ও কাণ্ডের যুক্ত স্থান থেকে একটি করে কলি বের হয়। ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে, পাপড়ির প্রস্থ ৭ থেকে ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। ফল ক্যাপসুল। ফুল ফোটে অক্টোবর থেকে জানুয়ারিতে। তবে শীতের সময় ফুল বেশি দেখা যায়। বীজের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি। বৈজ্ঞানিক নামের শেষ অংশের অর্থ পয়সাকৃতি পাতা। সংস্কৃত নাম মুসাকারনি। যায় অর্থ হলো ইঁদুরের কানের মতো পাতা।

ভুঁই আঁকড়ার আদি আবাস উত্তর ও দ‌ক্ষিণ আমেরিকা। উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ছড়িয়েপড়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানানসই হয়ে গেছে। রোদের আলো ও হালকা ছায়াময় পতিত জমি কিংবা সবুজ ঘাসের চারাবাড়িতে ও রাস্তার আশপাশ এ উদ্ভিদের জন্য আদর্শ স্থান। বাড়ির লনের একপাশে কিংবা টবে শোভাবর্ধনকারী ফুল হিসেবে লাগানো যেতে পারে। ছোট ছোট ফুলে মৌমাছি, পিঁপড়া বিচরণ করে মধুর জন্য। ঢাকার রমনা পার্কে, মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও ভুঁই আঁকড়া রয়েছে। বৈজ্ঞানিক নাম evolvulus nummularius। ইংরেজি নাম Dwarf Morning Glory, Roundleaf Bindweed।পরিবার Convolvulaceae.