তেলিপাড়া চরে ছোট জিরিয়া

তেলিপাড়ার চরে ছোট জিরিয়া, ১২ নভেম্বর ২০১৭, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে
তেলিপাড়ার চরে ছোট জিরিয়া, ১২ নভেম্বর ২০১৭, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা সদর থেকে রওনা হয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের গুদারাঘাটে এসে থামলাম। কোষানৌকায় করতোয়া নদী পার হয়ে দিগন্তবিস্তৃত চরে নামলাম। রোদেলা সকাল, খানিকটা শীত শীত ভাব। চরের কিনারায় নদীর তীর ঘেঁষে চাষিরা কৃষিকাজে ব্যস্ত। ক্যামেরা কাঁধে আমরা তিনজন ঘাটে নেমে নদীর তীর বরাবর চরে হাঁটতে লাগলাম। দূরে একটি মেছো ইগলকে (Osprey) চরের বালুতে চুপচাপ বসে থাকতে দেখলাম। কতগুলো পোষা হাঁস নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে আর প্যাঁক প্যাঁক করে ডাকছে। কিছু আবাবিল (Barn Swallow) পাখি নদীতে ওড়াউড়ি করছে আর মাঝেমধ্যেই ডাইভ দিয়ে ছোট ছোট মাছ ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে। ওপার থেকে হঠাৎই ছোট একটি পাখি উড়ে নদীপাড়ের বালুমাটিতে আমার ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল। গলায় কালো মালা পরা পাখিটির দুই চোখের চারদিকে দুটি হলদে বলয়। চমৎকার লাগছিল। কয়েকটা ভালো ছবি তুললাম।

এরা একাধারে এ দেশের বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী, দুর্লভ পান্থ পরিযায়ী এবং বিরল আবাসিক পাখি ছোট জিরিয়া। গলায় মালার মতো বলয় থাকায় দ‌ক্ষিণবঙ্গে পাখিটি মালা চ্যাগা নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Little Ringed Plover। Charardiidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম charadrius dubius

মালা চ্যাগা ছোট আকারের সৈকত পাখি। দৈর্ঘ্য ১৭ সেমি ও
ওজন ২৮ গ্রাম। একনজরে বাদামি সাদা পাখি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রজননকাল বাদে অন্য সময় প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি সাদা। দেহের ওপরটা বালু-বাদামি ও নিচটা সাদা। কপাল, ভ্রুরেখা, ঘাড় ও গলা সাদা। গলার বাদামি মালা মাঝখানটায় ভাঙা। চোখ কালচে বাদামি। ঠোঁট কালো, ঠোঁটের গোড়া বাদামি। চোখের চারদিকে হলুদ বলয়। হলুদাভ গোলাপি পা। কালচে নখ। প্রজননকালে গলার মালা কালো হয়ে যায়। কপালের সামনে একটি ও মাথার চাঁদিতে আরেকটি কালো ফিতা দেখা যায়। ঘাড়ের পেছনে দুটি গলাবন্ধ থাকে।

ছোট জিরিয়া বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে বাস করে। সারা দেশে ছোট-বড় সব ধরনের জলাভূমিতে দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট বিচ্ছিন্ন ঝাঁকে বিচরণ করে। দিনে ও রাতে সক্রিয় থাকে। পানির ধারে চুপি চুপি হেঁটে মাটি থেকে কেঁচো, ছোট জলজ পোকামাকড়, শূককীট, গুবরে পোকা, ছোট কাঁকড়া ইত্যাদি কুড়িয়ে খায়।

মার্চ-আগস্ট প্রজননকাল। এ সময় পাথুরে নদীর পাড়, হ্রদ বা ডোবায় ঘাস, লতা ইত্যাদি দিয়ে ছোট বাসা বানায়। ডিম পাড়ে চারটি। ডিমের রং ধূসর। এক মৌসুমে স্ত্রী পাখি এক-তিনবার ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৫ দিনে। ডিম থেকে ফোটার পর দ্রুত বাসা ছাড়ে। প্রায় ৩০ দিন পর ওড়ার পালক গজায়। আয়ুষ্কাল প্রায় পাঁচ বছর।