রোবট নয় আসবেন গৃহকর্মী

প্রথম অালো ফাইল ছবি
প্রথম অালো ফাইল ছবি

রোবটডাকো ডটকম। ডাক পেয়ে রোবট না এলেও ৩০ মিনিটের মাথায় বাসায় চলে আসবেন গৃহকর্মী বা কাজের বুয়া। তিনি বাসার নিচে আসামাত্রই গ্রাহক মুঠোফোনে জানতে পারবেন কে এসেছেন। সেই প্রশিক্ষিত গৃহকর্মী ঘরের কাজ শেষে প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা মজুরি নিয়ে চলে যাবেন। 

রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য এমন একটি সেবা শুরু হতে যাচ্ছে আগামী মাস থেকে। সেবামূলক এই অ্যাপের নাম রোবটডাকো ডটকম (www.robotdako.com)।
উদ্যোক্তারা জানান, গৃহকর্মীর প্রোফাইল, রেটিং, কার কোন ধরনের কাজের দক্ষতা আছে, তা দেখা যাবে মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে। গৃহকর্মীর হাতেও থাকবে মুঠোফোন, যার মাধ্যমে তিনি অ্যাপসের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। বর্তমানে এই সেবার জন্য নির্বাচিত গৃহকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে।
রোবটডাকো ডটকম কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গৃহকর্মীদের বর্তমান সেবার প্রতি ইঙ্গিত করে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, ‘ম্যাডাম এক দিন আসেন, আর তিন দিন আসেন না...।’
অন ডিমান্ড এই মেইড সার্ভিসের পাশাপাশি বাসায় বাচ্চা দেখাশোনার জন্যও লোক পাওয়া যাবে অ্যাপের মাধ্যমে।
এই অ্যাপে উদ্যোক্তা মেহেদী স্মরণ জানালেন, তিনি এবং তাঁর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান মিলে এ সেবাটি চালু করতে যাচ্ছেন। তবে মূল বিষয়টি দেখভাল করেন স্মরণ নিজেই। এ কাজের জন্য আপাতত মোহাম্মদপুরে একটি অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এই দুই ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি পাবনায়।
গত শুক্রবার অফিসে গিয়ে কথা হলো মেহেদী স্মরণের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বর্তমানে শুধু মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা রোবটডাকো অ্যাপের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘরে বসেই পাচ্ছেন। এ কাজের জন্য সাতজন কর্মী আছেন তাঁদের। এটা করতে গিয়েই গৃহকর্মী সরবরাহের এই ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে। কারণ গৃহকর্মী নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন না এমন বাসিন্দার সংখ্যা কম। আবার গৃহকর্মী পেলেও প্রশিক্ষিত পান না। তাই এ সেবাটি জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। ফেসবুকে প্রচারের পর অনেকেই উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
এই গৃহকর্মীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে অষ্টম শ্রেণি পাস। আর যখন দরকার তখনই সেবাটা পাবেন গ্রাহকেরা।
গ্রাহক এবং গৃহকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে এ ব্যবসার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন স্মরণ। তাই অ্যাপে ইমার্জেন্সি বাটন (জরুরি) যুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হবে সব সময়। অফিস থেকেই সার্বক্ষণিক নজরদারির কাজ চলবে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন কিছু মানুষ সহজে গ্রহণ করতে চান না। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে লোকসানের কথা মাথায় রেখেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানান মেহেদী।
মেহেদী স্মরণ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন পরিবার ছাড়া ঢাকায় একা থেকেছি। দিনের পর দিন গৃহকর্মীদের হাতের রান্না খেতে হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা তেমন ভালো না। আর শহুরে জীবনে একক পরিবারে গৃহকর্মী এখন খুবই প্রয়োজনীয় একটি সেবা। কর্মজীবী নারীদের বেলায় তো কথাই নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী সরবরাহ করব না। যাঁর যখন প্রয়োজন তিনি তখন ডাকবেন। যতক্ষণ কাজ করবেন ততক্ষণের টাকা পাবেন। একে কীভাবে একটি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সে চেষ্টা করা হবে।’
মেহেদী স্মরণ বলেন, ‘আমরা প্রতীক অর্থে রোবটডাকো নামটি নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু পুরোপুরি মাঠে নামার আগেই ঢাকায় সত্যিকারের রোবট চলে এসেছে। রোবট সোফিয়া, রোবট ক্যাফে আকর্ষণ জাগিয়েছে। অনেকে ভাবেন আমরা হয়তো ওই কাজগুলোর সঙ্গেও যুক্ত।’
রোবটডাকো নগরবাসীর ঘরের ‘কল বেল’ হিসেবে কাজ করতে চায়-জানান স্মরণ।