আওয়ামী লীগে ১২ আগ্রহী, বিএনপিতে ২

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন চাচ্ছেন ১২ জন। তবে দল থেকে এখনো কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে ভোটারদের সঙ্গে কুশলবিনিময় শুরু করেছেন।

নতুন এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপি থেকে সমর্থন চাচ্ছেন দুজন। তাঁদের মধ্যে একজন ২০১১ সালে মান্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি। আওয়ামী লীগের সমর্থন চাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনও গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। তাই এবারও এই দুটি দল থেকে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলের সমর্থকেরা। 

গত জুলাইয়ে মান্ডা ইউনয়ন পরিষদ কাঠামো ভেঙে ডিএসসিসির ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়। এর মধ্যে গ্রিন মডেল টাউন থেকে কাজিবাড়ি, এর পশ্চিম পাশ থেকে দানবের গলির পূর্ব অংশ, এই গলির পশ্চিম পাশ থেকে হিরু মিয়া রোডের পূর্ব পাশ, হিরু মিয়া রোডের পশ্চিম পাশ থেকে লাল মিয়া রোডের পূর্ব পাশ ও লাল মিয়া রোডের পশ্চিম পাশ থেকে মান্ডা খাল পাড় এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। এ ওয়ার্ডে ভোটারসংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার।

আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার মান্ডা হায়দার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বৈঠক করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বৈঠকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য ও ডিএসসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম, মুগদা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, মান্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতে ডিএসসিসির ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে কে কে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তা জানতে চান থানা ও মহানগরের নেতারা। এ সময় মান্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান, সাবেক সভাপতি এখলাস হোসেন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামিদুল হক, সাইফুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জমসের, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সমুরুদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোলায়মান, ৭১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব হোসেনসহ ১২ জন আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে তাঁদের নাম, পদবি লিখে নিয়ে যান থানা কমিটির নেতারা।

মুগদা থানা ও মান্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, মান্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে মিল নেই। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সহ্য করতে পারে না। তাই এক পদে এতজন প্রার্থী হতে চান। এমন অমিলের কারণেই ২০১১ সালে মান্ডা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত হতে হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, এই ইউপি নির্বাচনে দল থেকে সামিদুল হককে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছিলেন দলের কর্মী হিসেবে পরিচিত শাহ আলম হকসহ আরও কয়েকজন। এতে দলীয় প্রর্থীর পরাজয় ঘটে। পরে শাহ আলমকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এবার এমন হলে আবারও আগের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে সবাই কিছুটা সতর্কও।

জানতে চাইলে মান্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশেই ওই বৈঠক করা হয়েছিল। এর ফলাফল কয়েক দিনের মধ্যে সাংসদের কাছে ও মহানগর কমিটির কাছে জমা দেবে মুগদা থানা কমিটি। এরপর দল যাঁকে যোগ্য মনে করবে, তিনিই কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন।

সামিদুল হক বলেন, আগামী মঙ্গলবার স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকে বসার কথা আছে। ওই বৈঠক থেকেই দলের সমর্থন চূড়ান্ত হতে পারে। পরে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবে মহানগর কমিটি।

বিএনপি

বিএনপির স্থানীয় সূত্র জানায়, এবার ডিএসসিসির ৭১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মান্ডা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. খোরশেদ ও ৭১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি নবী উল্লাহ খান প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের সমর্থন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তাঁরা দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে দল থেকে তাঁরা এখনো এককভাবে সমর্থন পাননি।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, ২০১১ সালে মান্ডা ইউপির চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে সমর্থন পেয়েছিলেন আলমাস হোসেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেন খোরশেদ। তারপরও আলমাস হোসেন জয়লাভ করেন। তবে এবার দলের বাইরে গিয়ে খোরশেদ নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে নবী উল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুজনই দল তথা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সমর্থন চাচ্ছি। তিনি সবকিছু বিবেচনা করে আমাকেই সমর্থন দেবেন বলে আশা করি।’