শত পিঠা ও খাবারের আয়োজন মাগুরায়

স্টলে সাজানো হরেক রকমের পিঠা ও অন্যান্য খাবার। কালেক্টরেট চত্বর, মাগুরা, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
স্টলে সাজানো হরেক রকমের পিঠা ও অন্যান্য খাবার। কালেক্টরেট চত্বর, মাগুরা, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

অন্তত ১০০ রকমের পিঠা আর খাবার। বৈচিত্র্যময়, দৃষ্টিনন্দন আর বাহারি সব নাম সেসবের। কোনোটির নাম হৃদয়হরণ। আবার কোনোটির জামাই ভোলা। পুঁই ফলের শুঁটকি আর টক-জাতীয় খাবার ‘খাটার’। নাম শুনলে জিবে জল আসে। মাগুরার ঐতিহ্যবাহী এমন মজাদার পিঠা নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো অন্য রকম এক পিঠা ও খাবার উৎস। স্থানীয় কালেক্টরেট চত্বরে আজ রোববার বিকেলে বসেছিল পিঠা আর খাবারের মেলা।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রমী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মেলায় খাবার ছিল প্রচুর, কিন্তু দাম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না। আর তাই যে যাঁর ইচ্ছেমতো খেয়েছেন শুরুতে। দোকানিরা সেধেই খাইয়েছেন। পরে খাবারে ঘাটতি দেখা দিলে দাম নির্ধারণ করা হয়। তা-ও বেশি না। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে নানা স্বাদের রকমারি মজাদার এসব পিঠা ও খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন আগ্রহী দর্শকেরা।

স্টলেই চলছে পিঠা বানানো। ছবি: প্রথম আলো
স্টলেই চলছে পিঠা বানানো। ছবি: প্রথম আলো

পিঠা ও খাবার উৎসবে অংশ নেওয়া মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের হামিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎসবে আমরা হৃদয়হরণ, দুধ পুলি, মাল পোয়া, নকশী, সূর্যমুখী, ঝিনুক, রজনীগন্ধা, রসপাকান, বজামাই ভোলাসহ ২৫ রকমের পিঠা ও মাগুরার বিভিন্ন আমিষ ও নিরামিশ খাবার এনেছি। এগুলো সবার সামনে উপস্থাপন করতে পেরে আমরা দারুণ খুশি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমাদের এসব পিঠা ও খাবার সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা ছিল না। এখানে এসে আমরা নতুন কিছু পিঠা ও খাবার সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা জহুরা বলেন, বিচিত্র স্বাদের মজাদার কিছু পিঠার পাশাপাশি উৎসবে আমরা আমিষ ও নিরামিশ বেশ কিছু খাবার এনেছি, যা প্রচলিত অন্য সব খাবারের থেকে ভিন্ন। সচরাচর এসব খাবার বাড়িতে রান্না করা হয় না। তবে এগুলো দারুণ স্বাদের এবং মাগুরার জনপ্রিয় খাবার। পুঁই ফেলের শুঁটকি, খাটা, সবজি কপির মুগডাল, ছিতরুটিসহ নানা রকম খাবারের পদ রয়েছে।
সন্ধ্যায় উৎসবে তিন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী সেরা রাঁধুনিদের পুরস্কৃত করা হয় মেলায়। যেসব স্টল পুরস্কার পেয়েছে, সেগুলো হলো পিঠা ক্যাটাগরিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (প্রথম), জীবনসংগ্রাম সংস্থা (দ্বিতীয়) ও জাতীয় মহিলা সংস্থা (তৃতীয়)। আমিষ ক্যাটাগরিতে জাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা (প্রথম), আলোর সন্ধানী মহিলা সংস্থা (দ্বিতীয়) ও সন্ধি মহিলা উন্নয়ন সংস্থা (তৃতীয়) এবং নিরামিষ ক্যাটাগরিতে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর (প্রথম), নিরিবিলি মহিলা কল্যাণ সমিতি (দ্বিতীয়) ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আরডিসি (তৃতীয়)।

দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টল ঘুরছেন। ছবি: প্রথম আলো
দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টল ঘুরছেন। ছবি: প্রথম আলো

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিজয়ীদের পুরস্কার দেন। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ ‍কুমার কুণ্ডু, সিভিল সার্জন মুন্সী মো. সাদুল্লাহ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাসির, জেলা ও দায়রা জজের স্ত্রী রুখসানা ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবের আয়োজন সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দর্শনার্থীরা মাগুরার ঐতিহ্যবাহী এসব খাবার সম্পর্কে নতুন করে জেনেছেন। অনেক রাঁধুনি না জানা পিঠা বা খাবারের রেসিপি জেনে নিচ্ছেন। আশা করছি, এই উৎসবের মাধ্যমে মাগুরা ঐতিহ্যবাহী পিঠা ও খাবারগুলো পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এই জনপদে যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে।