অন্তঃসত্ত্বা শিশুটির দায়িত্ব কে নেবে?

এক কিশোরের সঙ্গে শিশুটির ঘনিষ্ঠতা হয়। এরপর তা গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। একপর্যায়ে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কিশোরটির সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পরদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে কিশোর উধাও হয়। আর ফিরে আসেনি।

মেয়েটি (১৩) এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার নিজের ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে পড়েছে অকূলপাথারে। স্বামী (১৭) ও অনাগত শিশুটির পিতার স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সে। কে তার দায়িত্ব নেবে?

অন্তঃসত্ত্বা ওই মেয়ে গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলে, ভোলার সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের একটি গ্রামে থাকে তারা। তার বাবা নদীভাঙনের শিকার। ভিটেমাটি হারিয়ে এখন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েক বছর ধরে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ওই বাড়িতেই বছর খানেক আগে কিশোরটির সঙ্গে তার পরিচয়। সেই সুবাদে ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও গ্রামবাসী কিশোরের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়। এ সময় সে এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। কিন্তু বিয়ের পরের দিন তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি পালিয়ে ঢাকা চলে যান। আর ফিরে আসেননি। সাত মাস কেটে গেছে। গ্রামের লোকজন তাকে মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তার বিয়ের কাবিন নেই। এ কারণে মামলাও নেওয়া হচ্ছে না।

শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, সদরে ব্র্যাকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সে স্থানীয় থানায় ও আদালতের আইন সহায়তাকেন্দ্রে গিয়েছে। কিন্তু কাবিন ছাড়া মামলা নেওয়া হয়নি। শেষমেশ স্বামীর স্বীকৃতি ও প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন বরাবর আবেদন করেছে।

পশ্চিম ইলিশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ওই পরিস্থিতিতে বিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ভেবেছিলাম বিয়ে হলে সমস্যাটার আপাতত সমাধান হবে। কিন্তু ওর বাবা-মা কিশোরটিকে নিয়ে এভাবে পালিয়ে যাবেন ভাবিনি। মেয়েটাকে সহযোগিতা দেওয়া দরকার।’

কাজি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তিনি দুই বালক-বালিকার বিয়ে পড়িয়েছিলেন। কিন্তু আঠারো বছর পূর্ণ না হওয়ায় কাবিন হয়নি।

জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক (মো. সেলিম উদ্দিন) তাঁকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্ত চলছে।