বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার নামে ২৫ লাখ টাকা আদায়

বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার জন্য চাঁদপুরের কচুয়ার একটি গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা প্রায় ২৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের কর্মী সাইফুল ইসলাম ওই টাকা আদায় করেছেন। টাকা না দেওয়ায় ৬০ জন আবেদনকারীকে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনাটি হাজীগঞ্জ উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের আকানিয়া গ্রামের।

বিদ্যুৎ–সংযোগের জন্য আবেদনকারী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকানিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম পেশায় একজন মৎস্যজীবী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। গ্রামের ১৬০ গ্রাহকের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে নিয়েছেন সাইফুল। এরই মধ্যে ওই ১৬০ গ্রাহকের মিটার লাগানো হয়েছে। আরও ৬০ জন পুরো টাকা পরিশোধ না করায় তাঁদের এখনো মিটার দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ৬০ জন কোনো টাকা না দেওয়ায় বিদ্যুৎ–সংযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গত সপ্তাহে সরেজমিনে আকানিয়া গ্রামে গিয়ে একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। কলিম উল্লাহ নামের একজন বলেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা দেওয়ার পর তাঁর বাড়িতে মিটার লাগানো হয়েছে। তবে এখনো বিদ্যুৎ–সংযোগ পাননি।

আবুল বাসার খন্দকার বলেন, তিনিও সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে মিটার পেয়েছেন।

একই গ্রামের বড়বাড়ির মাহবুবুর রহমান জানান, টাকা না দেওয়ায় তাঁকে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও ১০ জন গ্রাহক বলেন, তাঁরা সাইফুলকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে দিয়ে মিটার নিয়েছেন। এসব মানুষ দ্রুত বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাড়ে ১২ হাজার টাকা হিসাবে ১৬০ জনের কাছ থেকে ২০ লাখ এবং ৬০ জনের কাছ থেকে ৬ থেকে ৭ হাজার করে আরও ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায় করা টাকার মধ্যে তিনি (সাইফুল) শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। সফিকুল ইসলামের সহযোগিতায় সাইফুল তাঁর গ্রামে বিদ্যুৎ–সংযোগ নেওয়ার কাজ করছেন।

সাইফুল বলেন, ‘এক বছর ধরে গ্রামের মানুষের জন্য বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে কাজ করছি। ২২০ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৬০ জনের মিটার লাগানো হয়েছে। ৬০ জন মিটারের অপেক্ষায় আছেন।’ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে সাইফুল বলেন, ‘সবাই টাকা দিলে ২৭ থেকে ২৮ লাখ টাকা হওয়ার কথা। অথচ মাত্র ১১ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে ২০ লাখ। এর মধ্যে শাহরাস্তির ওয়ারুক এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলামকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। সফিকুল টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।’ সাইফুল দাবি করেন, সব গ্রাহক টাকা না দেওয়ায় তাঁকে জমি বেচে টাকা দিতে হয়েছে।

এদিকে সফিকুল ইসলাম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সাইফুল এ পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। মিটার লাগানো হয়েছে ১৭৫টি। আরও ৫০–৬০টি মিটার দেওয়া হবে। টাকা না দেওয়ায় মিটারগুলো দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিচ্ছে, তারপরও কেন টাকা নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে সফিকুল বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ও ঠিকাদার টাকা ছাড়া কোনো কাজ করে না। আপনারা সবাই জানেন।’

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর (চাঁপবিস) মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ বলেন, ‘বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে কোনো দালাল বা নেতা-কর্মীকে টাকা না দেওয়ার জন্য আমরা নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছি। সরকার বিনা মূল্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ সহজ–সরল। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে একটু সময় লাগবে।