বিয়ের টাকা জোগাড়ে শিশু অপহরণ, খুন

গতকাল রিফাত হোসেনের লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারির ছবি: ফোকাস বাংলা
গতকাল রিফাত হোসেনের লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারির ছবি: ফোকাস বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অপহরণের ১০ দিন পর রিফাত হোসেন (৫) নামের এক শিশুর বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের খড়িয়ালা গ্রাম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের এক সহকর্মী নিজের বিয়ের টাকা জোগাড় করতে শিশুটিকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

রিফাত উপজেলার খড়িয়ালা গ্রামের বাহার মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বরগুনার পাথরঘাটার সোহাগ মিয়া (২৪), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার সোলায়মান মিয়া (২২) ও নোয়াখালীর মো. ইলিয়াস (৫৫)। আর মূল পরিকল্পনাকারী মিজান পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। রিফাতের বাবা বাহার মিয়া ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা খড়িয়ালা গ্রামে রাইডার নামে একটি ব্যাগ তৈরি কারখানায় কর্মরত।

রিফাত হোসেন
রিফাত হোসেন

বাহার মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণকারীরা তাঁদের প্রতিবেশী। তাঁদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে বাড়ির সামনে থেকেই নিখোঁজ হয় রিফাত। তিনি বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন এবং ৭ জানুয়ারি আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর অপহরণকারীরা বাহারের প্রতিবেশী এক কৃষককে ফোন করে জানান, রিফাত তাঁদের কাছে আছে। ফোন নম্বর সংগ্রহ করে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রিফাতের বাবা। এ সময় অপহরণকারীরা মুঠোফোনে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। রিফাতের বাবা মুক্তিপণের বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে পুলিশের পরামর্শে তিনি তিনটি বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা পাঠান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, অপহরণকারীদের ধরতেই তাঁরা বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলেছিলেন। এর মধ্যে সিলেট থেকে কিছু টাকা তোলেন এক ব্যক্তি। পরে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অপহরণকারীদের সম্পর্কে তথ্য পায় পুলিশ। এরপর রোববার রাতে খড়িয়ালা গ্রামের ভাড়া বাসা থেকে সোহাগ, সোলায়মান ও ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, রাতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শিশুটিকে অপহরণ এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার কথা স্বীকার করেন ওই তিন ব্যক্তি। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকালে তাঁদের ভাড়া বাসার বাথরুমের ফলস সিলিংয়ের ওপর থেকে শিশুটির বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, ওই ভাড়া বাসায় তাঁদের সঙ্গে মিজান নামের এক সহকর্মী থাকেন। মিজান সম্প্রতি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিয়ের অর্থ জোগাতে তিনি ওই অপহরণের পরিকল্পনা করেন। তিনি এখনো পলাতক।