যশোরে সড়ক সম্প্রসারণের নামে লুটপাটের মওকা

যশোরের শতবর্ষী গাছ কাটার বিরুদ্ধে আজ সকালে ডিআরইউতে বাপার সংবাদ সম্মেলন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
যশোরের শতবর্ষী গাছ কাটার বিরুদ্ধে আজ সকালে ডিআরইউতে বাপার সংবাদ সম্মেলন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক (যশোর রোড) উন্নয়নের নামে গাছ কাটার সিদ্ধান্তকে অশুভ চক্রের জন্য লুটপাটের মওকা বলে মনে করে ছয়টি পরিবেশবাদী সংগঠন। সংগঠনগুলো বলছে, সড়ক ও বন বিভাগের কর্মকর্তা, পুলিশ, প্রশাসক, রাজনীতিক মিলে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘ দিন ধরে গাছ লুট করছে। এই চক্র সড়ক সম্প্রসারণের নামে যশোর রোডের গাছগুলো সাবাড় করতে চায়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে সংগঠনগুলো ‘উন্নয়নের নামে যশোর রোডের মুক্তিযুদ্ধ, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বৃক্ষ নিধনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), তরুপল্লব, নাগরিক উদ্যোগ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, ব্লু প্লানেট ইনিশিয়েটিভ, গ্রীন ভয়েস।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন। তাতে বলা হয়, উন্নয়নের জন্য যশোর রোডের শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হবে আত্মধ্বংসী। উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আগে তার পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি। অথচ উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। যশোর রোডের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা শুভ চক্রের জন্য বৃক্ষনিধন এবং লুটপাটের জন্য এক বিরাট মওকা।

যশোর রোডের গাছের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব। তাতে বলা হয়, যশোর-কলকাতা পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার সড়কের গাছগুলো বনভূমির আকারে থাকলে ৩৬ হাজার হেক্টরের বনের সমান হতো। এই গাছগুলো ৯ লাখ ১২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে ছায়া দিচ্ছে। এই সড়কের দুই পাশে ৫০ ফুট করে জায়গা ইতিমধ্যে সরকার অধিগ্রহণ করে রেখেছে। কাজেই গাছ না কেটেও সড়ক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা গাছ কেটে সড়ক উন্নয়নের মতো পরিকল্পনা নিয়েছেন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

বাপার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান, বাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহীদুল হক খান প্রমুখ।

৬ জানুয়ারি যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক যথাযথ মানের ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় রাস্তার দুই পার্শ্বে গাছসমূহ অপসারণের বিষয়ে’ এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানানো হয়, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি (যশোর রোড) চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কটির দুই পাশে নতুন-পুরোনো অনেক গাছ রয়েছে। সেগুলো রেখে মহাসড়ক চার লেন করা সম্ভব না। এ কারণে জনস্বার্থে গাছগুলো কাটতে হবে।

২০১৭ সালেও একবার যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়নের জন্য দুই পাশের বিভিন্ন প্রজাতির ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মহাসড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো আপত্তি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কোনো গাছ না কেটে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।