মেয়ের বিয়ে দিয়ে হাজতে বাবা

বাল্যবিবাহের আইনের কড়াকড়ির বিষয়টি খুব ভালোই জানা আছে তাঁর। ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দিলে জেল-জরিমানা হতে পারে। তাই সাড়ে ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিতে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া সনদ নেন। এমনকি লোক জানাজানির ভয়ে বিয়ের আয়োজনও করেছিলেন ঘরোয়াভাবে। তবে এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার দায়ে এখন জেলহাজতে বাবা।

গতকাল সোমবার বাল্যবিবাহের এই ঘটনা ঘটেছে মাগুরার সদর উপজেলার তিতারখাঁপাড়া গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের আতর আলী তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়েটি তিতারখাঁপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। গতকাল দুপুরে বাহারবাগ গ্রামের আশেক বিশ্বাসের ছেলে এরশাদ বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে হয় মেয়েটির। ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ, এটা আতর আলী ও তাঁর পরিবারের লোকজন জানতেন। তাই তাঁরা কৌশলী হন। মেয়ের বয়স বেশি দেখিয়ে ভুয়া সনদ নেন।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি, মেয়েটির বয়স ১৬ বছর ৬ মাস। মেয়েটির মা-বাবা জানতেন যে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই তাঁরা কৌশল অবলম্বন করেন। মেয়েটির বয়সের ভুয়া সনদ নেন। এতে মেয়েটির বয়স বেশি দেখানো হয়েছে।’

সহকারী কমিশনার বলেন, ‘খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে আমরা পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে যাই। যাওয়ার পথে একটি গাড়িতে চেপে বর-বউকে চলে যেতে দেখি। আতর আলীর বাড়িতে পৌঁছে বিয়ের তেমন কোনো আয়োজন দেখিনি। তাঁরা আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচতে বেশ কৌশল নিয়েছেন। জানাজানির ভয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানের বড় কোনো আয়োজন করেননি। পরে আইন ভেঙে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অপরাধে মেয়েটির বাবা আতর আলীকে আটক করে পুলিশ।’

মৌসুমী জেরিন বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে, এই আইন ভাঙলে পিতা-মাতা বা আত্মীয়স্বজনেরও শাস্তির বিধান রয়েছে। আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ছয় মাস ও সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিয়ে শেষে মেয়েটিকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়ায় ওই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আইন ভেঙে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অপরাধে আতর আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ‘শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে আজ ওই মামলা করেন। পরে আতর আলীকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।