কলার মোচায় কাঠঠোকরা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কলার মোচায় ছোট সোনালিপিঠ কাঠঠোকরা l ছবি: লেখক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কলার মোচায় ছোট সোনালিপিঠ কাঠঠোকরা l ছবি: লেখক

নিত্যদিনের মতো ক্যামেরা হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমলকী ও কলাবাগানের মাঝখানের কাঁচা রাস্তা ধরে হাঁটছি। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি যদি কোনো পাখি, প্রজাপতি বা বাদুড়ের দেখা পাই। কলাবাগানের বেশ কিছু কলাগাছে মোচা এসেছে। সারিবদ্ধভাবে সাজানো লালচে ফুলগুলো দেখতে বেশ লাগছে। ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে ছোট কলা ও ফুলসমেত কলার মোচায় ক্লিক করছি। এমন সময় ক্যামেরার ফ্রেমের ভেতর লাল খোপওয়ালা সোনালি পিঠের এক পাখির প্রবেশ ঘটল। মনোরম ভঙ্গিতে উড়ে এসে আগন্তুক পাখিটি মোচার ওপর বসে দ্রুততার সঙ্গে কলা ফুলের রস পান করতে লাগল। তাড়াহুড়া দেখে মনে হলো সে খুব তৃষ্ণার্ত। এমন দৃশ্য ফ্রেমবন্দী করার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের। কিন্তু ভাবতে পারিনি, আজই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

এরা আমাদের অতিপরিচিত ছোট সোনালিপিঠ কাঠঠোকরা। ছোট লালচেপিঠ কাঠঠোকরা বা কাঠঠোকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Black-rumped Flameback, Lesser Goldenback বা Northern Golden-backed Woodpecker। Picidae পরিবারের এই পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Dinopium benghalens

এদের ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৬-২৯ সেন্টিমিটার। ওজন কম-বেশি ১০০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ হলুদাভ সোনালি। ওড়ার পালক, কোমর ও লেজের উপরিভাগ কালো। সাদা ঘাড়ে কালচে দাগ ও কালচে গলায় সাদা দাগ। চিবুক সাদা। সাদাটে বুক ও পেটে কালচে আঁশের মতো ছোপ। চোখের পাশে কালো ডোরা। চোখ লালচে বাদামি। ঠোঁট কালচে। পা ও পায়ের পাতা ধূসর সবুজ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও ওদের মূল পার্থক্য সুদৃশ্য ঝুঁটি ও মাথার চাঁদির রঙে। পুরুষের চাঁদি ও ঝুঁটি উজ্জ্বল লাল। স্ত্রীর সাদা বিন্দুসহ মাথার চাঁদির সামনের অংশ কালো ও পেছনের ঝুঁটি লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা স্ত্রী পাখির মতো, তবে চাঁদির সামনের অংশে সাদা বিন্দু নেই।

ছোট সোনালিপিঠ কাঠঠোকরা বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। দেশজুড়ে বন-বাগান ও লোকালয়ে প্রচুর দেখা যায়। গাছের কাণ্ড ও ডালে জোরে ঠোঁট দিয়ে আঘাত করে এবং মাটিতে ঝরাপাতা উল্টে পিঁপড়া, উই, মাকড়সা, ও অন্য কীটপতঙ্গ খায়। তবে ফল ও ফুলের রসও খুব পছন্দ করে। শক্ত পা ও অনমনীয় লেজে ভর করে ছোট ছোট লাফে গাছের কাণ্ড বেয়ে ওপরে ওঠে।

ফেব্রুয়ারি-জুলাই প্রজননকাল। এ সময় গাছের কাণ্ড বা শাখায় নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। অনেক সময় অন্য প্রজাতির গর্তবাসী পাখির বাসাও দখল করে। ডিম পাড়ে ৩টি। ডিম ফোটে ১৫-১৯ দিনে। বাচ্চারা প্রায় ২০ দিনে উড়তে শেখে ও বাসা ছাড়ে। আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর।