দীঘিনালার মিষ্টি পানের গ্রাম

বরজ থেকে পান তুলে বাড়ির উঠানে বাছাই করছেন পানচাষিরা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালার তেভাংছড়ায় l পলাশ বড়ুয়া
বরজ থেকে পান তুলে বাড়ির উঠানে বাছাই করছেন পানচাষিরা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালার তেভাংছড়ায় l পলাশ বড়ুয়া

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার তেভাংছড়া গ্রামে দেড় শ পাহাড়ি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে এক শ পরিবারই মিষ্টি পানের চাষ করে। অর্ধশত বছর ধরে এ গ্রামে পান চাষ হয়। পান চাষই গ্রামের পরিবারগুলোর উপার্জনের প্রধান উপায়।

উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তরে তেভাংছড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাইনী নদীর তীরবর্তী গ্রামটিতে যেদিকে চোখ যায়, কেবলই পানের বরজ। কৃষকেরা বরজ থেকে তুলে আনা পান বাড়ির উঠানে এনে স্তূপ করে রাখছেন। সেখানে পরিবারের সদস্যরা মিলে পান বাছাই করে আলাদা করে রাখছেন।

দীঘিনালা কৃষি অফিসের হিসাবে উপজেলায় গেল বছর ১৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টি পানের বড় বরজগুলো তেভাংছড়া গ্রামে অবস্থিত। তবে গ্রামটিতে ঠিক কী পরিমাণ জমিতে পান চাষ হয়, সেই হিসাব উপজেলা কৃষি অফিসের কাছে নেই। গ্রামের পানচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গ্রামটিতে প্রায় দেড় শ পানের বরজ আছে।

তেভাংছড়া গ্রামের কৃষকেরা জানান, সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার হাটে বিক্রির জন্য বরজ থেকে পান তোলা হয়। স্থানীয় হাটবাজারের ক্রেতারা ছাড়াও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু উপজেলার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে নিয়ে পান কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারে বড় আকারের এক বিড়া (৮০টি) পান বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। মধ্যম আকারের এক বিড়া পান ৪৫ থেকে ৬০ টাকায় আর ছোট পানের বিড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।

তেভাংছড়া গ্রামের পানচাষি শান্তি চাকমা (৪২) বলেন, ‘আমার বাপ-দাদারাও পান চাষ করত। এখন আমি করছি। উপার্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে পান চাষ। এ বছর ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে। আরও ৪৫ হাজার টাকার বেশি পান বরজে রয়েছে। এ বছর পানের দামও ভালো পাওয়া গেছে। আগামী বছর ৬০ শতক জমিতে পান চাষ করব। পান চাষের টাকায় তিন ছেলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।’

গ্রামের পানচাষি হেভেন চাকমা (৩৫) বলেন, তিনি ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন। ৭০ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে ইতিমধ্যে। আরও ৭০ হাজার টাকার পান বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি বিড়া পান ১০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পানচাষি ও বোয়ালখালী (সদর) ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিফিউজ চাকমা (৪০) বলেন, গ্রামে দেড় শ পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে এক শ পরিবার পান চাষ করে। পানের বরজ রয়েছে দেড় শটি। এ বছর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। পান বিক্রি করে তাঁর লাভ হয়েছে এক লাখ টাকা। ঋণসুবিধা দিলে পানচাষিরা আরও উপকৃত হতেন।

পান ব্যবসায়ী পরিমল দে বলেন, ‘তেভাংছড়া এলাকার পান খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমি পাইকারি দরে পান কিনে চট্টগ্রামের নাজিরহাট ও ফটিকছড়ি এলাকায় নিয়ে বিক্রি করি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এম শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তেভাংছড়া এলাকায় পান চাষ বাড়ছে। সেখানের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে পানচাষিদের সাহায্য করার জন্য বলা হয়েছে। পানচাষিরা যাতে ঋণসুবিধা পান, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।’