নেশা এখন পেশা

মনিরুজ্জামানের পাখির ঘর l ছবি: প্রথম আলো
মনিরুজ্জামানের পাখির ঘর l ছবি: প্রথম আলো

পাখির কিচিরমিচির শুনতে কার না ভালো লাগে! আর সেটা যদি হয় বাহারি রঙের পাখি এবং তা বিক্রি করে যদি ভালো দাম পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। সারা দিন পাখির সঙ্গে কাটিয়েও আসে না ক্লান্তি। তাই যে রঙিন বিদেশি পাখি পালন করা একসময় ছিল নেশা, তা-ই এখন পেশা হয়ে উঠেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহর এলাকার মনিরুজ্জামানের। তিনি প্রতি মাসেই পাখি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। তাঁর দেখাদেখি এখন অনেকেই বিদেশি পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও মনিরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনির ছোটবেলা থেকেই পাখি পালেন। দেশি পাখি পালতে হলে ধরাবাঁধা নিয়ম মানতে হয় বলে বিদেশি পাখি পালতেন তিনি। মনির ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ শহর থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে লাভবার্ড নামের চার জোড়া পাখির ছানা কিনে আনেন। বাড়িতে ছোট খাঁচায় রেখে সেগুলো পুষতে থাকেন। পরে সেই পাখিরা ডিম পেড়ে বাচ্চা দেয়। এভাবে এক বছরে ছয় জোড়া পাখির জন্ম হয়। এভাবেই শুরু মনিরের। সুযোগ পেলেই এখন তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাখির ছানা সংগ্রহ করতে থাকেন। এখন মনিরের খামারে লাভবার্ড, গোল্ডেন পেইন, ককাটেল, রেইনবো, লোরিকিটসহ ১১ প্রজাতির প্রায় ২০০ বিদেশি পাখি রয়েছে। এসব বিদেশি পাখি বিক্রি করে এখন প্রতি মাসে গড়ে তাঁর প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়। মনিরের পাখি দেখতে এবং কিনতে এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে তাঁর বাড়িতে।

সম্প্রতি পৌর শহরের গড়কান্দা এলাকায় মনিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাড়িটিতে দুটি পাকা ঘর। একটিতে মনির পরিবার নিয়ে থাকেন, আরেকটি শুধু পাখিদের জন্য। ২০ হাত লম্বা ওই ঘরে ১১ ধরনের পাখি আছে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের জন্য ঘরটিতে বড় বড় জানালা ও বৈদ্যুতিক পাখা রয়েছে। এ ছাড়া শীতে ঘরটি গরম রাখার জন্য লাগানো আছে ১০ থেকে ১২টি বৈদ্যুতিক বাতি।

মনিরের মা মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘ছেলেটার পাখি পালনের দিকে ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক। সারাদিন পাখি নিয়ে থাকে। বাইরে গেলেও মুঠোফোনে সারাক্ষণ পাখিগুলোর খোঁজখবর নেয়।’

পৌর শহরের বাসিন্দা মো. রাতুল বলেন, ‘এক বছর আগে আমি এখান থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে দুই জোড়া পাখি নিয়েছিলাম। সেই পাখি বংশবিস্তার করেছে। এখন আমার সংগ্রহে ছয় জোড়া পাখি আছে।’

মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে পাখি বিক্রি থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় আসে।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র সুরঞ্জিত সরকার বলেন, ‘মনিরের পাখির খামার আমি দেখতে গিয়েছিলাম। এক কথায় দারুণ। মনিরের দেখাদেখি এখন এলাকার অনেকেই পাখি পালতে আগ্রহী হচ্ছেন।’