গাছ কাটার অনুমোদন নেই

গাছ কেটে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল ‘সচেতন যশোরবাসী’র ব্যানারে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয় l প্রথম আলো
গাছ কেটে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল ‘সচেতন যশোরবাসী’র ব্যানারে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয় l প্রথম আলো

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই যশোর রোডের ২ হাজার ৩১৩টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। প্রচলিত আইনে এমন প্রকল্প নেওয়ার আগে অবস্থানগত ছাড়পত্র, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) এবং গাছ কাটার জন্য আলাদা অনুমোদন লাগে। এর কোনোটিই করেনি সড়ক সম্প্রসারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গাছগুলো না কেটে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কাছে অনুরোধ করেছে।

এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, যশোর রোডের গাছগুলো যেভাবে কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা দেশের পরিবেশ ও বনসংক্রান্ত একাধিক আইনের লঙ্ঘন। সরকারি সংস্থাগুলো এভাবে আইন ভাঙলে দেশের পরিবেশ কীভাবে রক্ষা পাবে? এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

শুরু থেকেই ওই বৃক্ষগুলো রক্ষায় পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। গাছ না কাটার দাবিতে গতকাল বুধবারও যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। এ বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা চলছে।

 পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যশোর রোডের ওই গাছগুলো না কেটে কীভাবে ওই সড়কটি নির্মাণ করা যায়, তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

ওই গাছগুলো কাটার উদ্যোগ সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাঁরা আরও খতিয়ে দেখে খুব দ্রুত তাঁদের অবস্থান জানাবেন।

বনজ সম্পদ পরিবহন বিধিমালায় সরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যেকোনো জমিতে কোনো গাছ থাকলেই সে তা নিজের ইচ্ছেমতো কাটতে পারে না। এ জন্য স্থানীয় বন বিভাগের কাছ থেকে ওই বৃক্ষ কাটা ও পরিবহনের অনুমতি নিতে হয়।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের যশোর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। দরকার হলে নেওয়া হবে।

দেশের শুধু ওই এলাকাতেই একই সঙ্গে কয়েক শ শতবর্ষী বৃক্ষ আছে। জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ পাভেল পার্থ বলেন, ‘মুজিবনগরের আম্রকাননের আমগাছ ও রমনার বটমূল যেমন আমরা কোনো যুক্তিতেই কাটতে পারি না, যশোর রোডের ওই বৃক্ষগুলো তেমনই কাটা যাবে না।’