৬ মাসের প্রাণ পেল যশোর রোডের গাছগুলো

যশোর-বেনাপোল সড়কে সারি সারি শতবর্ষী গাছ। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ এলাকা, যশোর, ১৫ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
যশোর-বেনাপোল সড়কে সারি সারি শতবর্ষী গাছ। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ এলাকা, যশোর, ১৫ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

যশোর রোডকে চার লেনে উন্নীত করতে গিয়ে সেখান থাকা শতবর্ষী গাছ কাটার ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে ওই সব গাছ কাটা যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আজ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন।

গতকাল বুধবার ‘গাছ কেটেই প্রশস্ত হচ্ছে মহাসড়ক’  শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ রিট আবেদনটি করে। আজ শুনানির জন্য তা আদালতে ওঠে। রিটের পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।

আদেশের পর মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে শতবর্ষী শতাধিক গাছ রক্ষায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। গাছ কাটার ওপর ৬ মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে এসব গাছ কাটা যাবে না। রুলে যশোর-বেনাপোল সড়কে অবস্থিত গাছগুলো আইন অনুসারে রক্ষায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪ লেনে উন্নীত করার ক্ষেত্রে গাছগুলো সংরক্ষণ করে বিকল্প হিসেবে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তুত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, যশোরের জেলা প্রশাসক, বেনাপোল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ বিবাদীদের ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত গাছ কাটার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে উন্নয়ন প্রকল্প চলবে।

মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানের ১৮(এ) ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে সরকারের দায়িত্ব পরিবেশ সংরক্ষণ করা। গাছ পরিবেশের অন্যতম উপাদান। গাছ কাটা হলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। শতবর্ষী গাছগুলো এমনভাবে আছে যা আমাদের একটি ঐতিহ্য। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।

যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। ৬ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এবং স্থানীয় সাংসদসহ অন্যান্য পদাধিকারীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

বহু বছরের পুরোনো অনেক গাছসহ বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে মহাসড়ক সম্প্রসারণের ওই কাজ শুরুর উদ্যোগের খবর গণমাধ্যমে আগেই প্রচারিত হয়েছে। এরপর থেকে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। গাছ কাটা, না কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

যশোর রোডের এসব গাছের মধ্যে ১৭৪ বছরের পুরোনো যশোরের তৎকালীন জমিদার কালী পোদ্দারের লাগানো তিন শতাধিক মেঘ শিরীষও রয়েছে। বর্তমানে যশোর রোড মানেই এই সব প্রাচীন বৃক্ষের সমাহার।